পুলিশ কমিশনার কঠোর হননি কেন, জানতে চান নাসিম
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘পুলিশ কমিশনার গতকাল বলেছেন, তাঁরা কঠোর হবেন। কঠোর হননি কেন এখনো? কবে আর কঠোর হবেন? প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, কেন এগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না, বলেন? এ ধরনের কথা আমরা আর শুনতে চাই না।’
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসিম এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু একাডেমি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওই সভার আয়োজন করে।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আজ একটি ফ্যাশন হয়ে গেছে, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন, সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন হয় না। তিনি চেষ্টা করছেন, আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর নির্দেশ না মানা ফ্যাশন হয়ে গেছে। নাসিম বলেন, কেন এ ব্যবস্থাপনা সঠিক হবে না? যারা এ ব্যাপারে কাজ করে, তারা সবাই দায়ী। কেন তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করছে না? এসব ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে রুখতে হবে। এসব ফ্রাঙ্কেনস্টাইন শেখ হাসিনার অর্জনকে নষ্ট করে দেবে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘সড়কে নৈরাজ্য, নানা ক্ষেত্রে প্রশাসনের শিথিলতা, নারী শিশু নির্যাতের বিরুদ্ধে ১৪ দল এখন থেকে সামাজিক আন্দোলন শুরু করবে। সড়কে একের পর এক মানুষ নিহত হচ্ছে। কেবিনেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন কাজ করেছি, প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশ দিয়েছেন। পার্লামেন্টে আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।’
মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, প্রশাসনকে বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন খাতকে বলা হয়েছে, এমনকি পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়ন করতে। তাহলে কেন সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না? তিনি বলেন, ‘এসব ক্ষমতাধর ব্যক্তি কারা? তারা পরিবহন খাতে হয়তো শ্রমিকনেতা, বাসমালিক অথবা প্রশাসনের লোক। কেন এগুলো বাস্তবায়ন হয় না? বাস্তবায়ন হবে না, একটি করে জীবন যাবে রাস্তায় আর সরকার দায়ী হবে? এটা কথা হলো? একটি জীবনের দাম কি ১০ লাখ টাকা? একটি জীবন কি অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হয়ে যাবে?’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসিম আরও বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে, আমি নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। প্রশাসনকে দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। কিন্তু অতি উৎসাহী প্রশাসনের কর্মকর্তারা, তারা মাঠপর্যায়ে থেকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে খাটো করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ছোট ছোট লাট আছে বিভিন্ন জায়গায়, তারা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান মনে করে নিজেকে। স্থানীয় পর্যায়ে এসব ছোট ছোট লাট উপজেলা নির্বাচনে তার প্রার্থীকে জেতানোর জন্য এমন কোনো কাজ নেই যেটা তারা করে না। এটা হতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন শক্ত আছে। প্রশাসনকে প্রধানমন্ত্রী নিজে নির্দেশ দিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। জনগণ যাঁকে ভোট দেন, তিনিই নির্বাচিত হবেন। তাহলে এসব তথাকথিত ক্ষমতাধর ব্যক্তি কারা? যারা প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে।’
নাসিম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করব, আপনারা ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। এ ধরনের কোনো কারচুপির চেষ্টা যেন না হয়, দেখবেন। নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দিতে হবে। ভোটার আসতে হবে। এখন আস্তে আস্তে ভোটাররা আসছে। সেই বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতি উপেক্ষা করে মানুষ এখন আসছে। এটাকে সফল করতে হবে আমাদের।’
বঙ্গবন্ধু একাডেমির সভাপতি নাজমুল হকের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও মোজাফফর হোসেন পল্টু প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ট্রাফিক পুলিশের এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার বিউপির ছাত্র আবরার আহমেদ নিহত হওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আবরারের মৃত্যুর জন্য পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাই দায়ী। কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, সুপ্রভাত পরিবহনের সংশ্লিষ্ট গাড়িটির ঢাকায় চলাচলের রুট পারমিট ছিল না। পাশাপাশি ওই বাসটির নামে এর আগেও ২৭ বার প্রসিকিউশন দেওয়া হয়েছিল। আছাদুজ্জামান মিয়ার প্রশ্ন ছিল, তাহলে সুপ্রভাত পরিবহনের এই বাসটি রাজধানীতে কীভাবে চলাচল করছিল? ওই দীর্ঘ বক্তৃতায় ডিএমপি কমিশনার সড়কের নানা নৈরাজ্যের কথা উল্লেখ করে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশকে কঠোর হতে বলেন।