পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীরা এখনো বিচারের বাইরে: হাফিজ উদ্দিন
পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরিকল্পনাকারীরা এখনো বিচারের বাইরে রয়ে গেছে। এটি বিচারব্যবস্থার একটি দুর্বল দিক বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘পিলখানার ট্র্যাজেডিতে নিহতদের মাগফিরাত কামনায়’ আয়োজিত আলোচনা সভায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ লেবার পার্টি এ সভার আয়োজন করে।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা, এ ঘটনার যারা পরিকল্পনা করেছে, তারা বিচারের বাইরে রয়ে গেছে। যারা বাস্তবায়ন করেছে, তাদের কাউকে কাউকে হয়তো বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনাকারীরা এখনো অধরাই রয়ে গেছে। এটিও এ বিচারের দুর্বল একটি দিক।’
এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার পর্যন্ত হয়নি উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। কয়েকজনকে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কবে কার্যকর হবে, তার কোনো ভবিষ্যৎ রূপরেখা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে পুরোপুরিভাবে জড়িত, অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, পরিকল্পনা করেছেন আমাদের প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা। ইপিআর বা পরবর্তীকালে বর্ডার গার্ড বিডিআর সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেছে দীর্ঘদিন যাবৎ। সংখ্যায় কম হলেও বীরত্বের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বৃহৎ বর্ডার ফোর্সের মোকাবিলা করে এসেছে। বাংলাদেশের জনগণের জান-মাল রক্ষার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। আপনারা শুনেছেন যেভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বর্ডার গার্ডরা অবিচার করত, তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে এই বিডিআর বাহিনী। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বর্ডার গার্ডের আগ্রাসী ভূমিকা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্যই এ বাহিনীকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও এর সদস্যদের মনোবল ধ্বংস করে দেওয়া এ হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এর সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক নেতারা, বিশেষ করে একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত ছিলেন। এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের আগেই এ হত্যাকাণ্ডের নায়কেরা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের বাড়িতে গিয়ে সভা করেছে। তাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে এসেছে। পরদিন আবার তাদেরই পাঠানো হয়েছিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।’
মানি লন্ডারিংয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীসহ বড় বড় নেতার নাম জড়িত রয়েছে উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, কিন্তু তাঁদের বিচার হয় না। অনেক সময় তাঁদের সাংসদ পদ স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তাঁরা সংসদে গিয়ে বসে থাকেন। স্পিকার বা সংসদ সচিবালয় কখনো সে রায় কার্যকর করে না।
সম্প্রতি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান কিছু কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘তারপর সরকারের টনক নড়ছে। ভেতরে–ভেতরে তারা দুর্বল। কিন্তু বাইরে তারা দেখানোর চেষ্টা করছে তারা বিশ্বের সেরা সরকার।’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেই দিন দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশের অবৈধ শাসকেরা এভাবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। জাতিসংঘের বিচার আদালতে অনেক বিদেশির বিচার চলছে।’
আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।