নৌকায় তুমুল আগ্রহ, ধানের শীষে কম
নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেতে প্রার্থীদের তুমুল আগ্রহ, ধানের শীষের প্রতি আগ্রহ কমেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতি আসনের বিপরীতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ১৫ জন। এক বছর পর তিনটি আসনের উপনির্বাচনে আগ্রহী পাওয়া গেছে গড়ে তিনজনের কম। অন্যদিকে গত সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন চেয়েছেন গড়ে ১৩ জন। এখন পাঁচটি উপনির্বাচনে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৬।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকা পেলেই জয় নিশ্চিত—এই বাস্তবতা থেকে আওয়ামী লীগের দিকে আগ্রহ বেশি। অন্যদিকে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামছে বিএনপি। যে কারণে ধানের শীষ প্রতীক পেতে আগ্রহ কমছে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ৭৮ জন। অন্যদিকে তিনটি আসনের বিপরীতে বিএনপির মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন মাত্র ৮ জন। ধানমন্ডি-১০ আসনে একজন ছাড়া কেউ ফরম নেননি। যে তিনজন ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁরা প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বাকি দুটি আসনের উপনির্বাচনের জন্য গতকাল পর্যন্ত ফরম নিয়েছেন পাঁচজন। আজ দলীয় ফরম নেওয়ার শেষ দিন।
দলীয় সূত্র বলছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ৩০০টি আসনে মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ৪ হাজার ২৩ জন। উপনির্বাচনে নৌকা পেতে ঢাকা-১০ এ ১০ জন, বাগেরহাট-৪ এ ১১ জন, গাইবান্ধা-৩ এ ২৫ জন, যশোর-৬ এ ১৩ জন ও বগুড়া-১ এ ১৯ জন মনোনয়ন ফরম নেন। গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন ফরম নিয়েছিলেন ৪ হাজার ৫৮০ জন। আর উপনির্বাচনে ধানমন্ডি-১০ এ একজন, বাগেরহাট-৪ এ চারজন ও গাইবান্ধা-৩ এ তিনজন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। যশোর-৬ আসনে দুজন ও বগুড়া-১ আসনে তিনজন ফরম নিয়েছেন গতকাল পর্যন্ত।
বিএনপির নেতারা বলছেন, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএনপি উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এটি তাঁদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একের পর এক সরকারের কারচুপি ও অনিয়মের বিষয় সামনে আসছে। নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কমে যাওয়াকে সরকারের প্রতি অনাস্থা হিসেবে দেখছে বিএনপি। এ ছাড়া মাঠের আন্দোলনে সুবিধা করতে না পারলেও ভোটের কারণে নেতা-কর্মীরা চাঙা হন। দলের সাংগঠনিক কাজেও গতি আসে। তাই পরাজয় জেনেও সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি কারও আস্থা নেই। পূর্বনির্দেশিত ফলাফলের নির্বাচনে ভোটাররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাই রাজনীতিবিদদের আগ্রহ হারানোটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে মনোনয়ন পেলেই নিশ্চিত জয়। তাই সরকারি দলে আগ্রহ বাড়ছে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি নালিশ ও অভিযোগের রাজনীতি করছে। মাঠের আন্দোলনে তারা জনগণের কোনো সমর্থন পায়নি। নির্বাচনে নেমেও আন্দোলনের কথা বলে, দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। তাই জনগণ তাদের ভোটেও প্রত্যাখ্যান করছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সাধারণ মানুষ নৌকা প্রতীকে রায় দিচ্ছে।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুসারে, প্রথম দফায় আগামী ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা-১০, বাগেরহাট-৪ ও গাইবান্ধা-৩ আসনের ভোট। ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে যশোর-৬, বগুড়া-১ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোট। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি ও ঢাকা-১০ আসনে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে)। বাকি চারটি আসনের উপনির্বাচনে ভোট হবে পুরোনো ব্যালট পদ্ধতিতে।
ইসির তথ্য বলছে, নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ টানা কমছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৮৭ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পড়েছিল ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে। একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচন বাদে অন্য সব জাতীয় নির্বাচনে ৫১ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৮০ শতাংশ। তবে সেই নির্বাচন নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। এরপর গত জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছিল মাত্র ২৩ শতাংশ। আর ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ভোট পড়েছে যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ২৯ শতাংশ।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন মানে নিশ্চিত জয়। তাই এমন সোনার হরিণ পেতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ঠিক একই কারণে পরাজয় নিশ্চিত ভাবায় বিএনপিতে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। তবু ভবিষ্যতের বিবেচনায় দলে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে কেউ কেউ পণ্ডশ্রম জেনেও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।