দুর্নীতি মামলার আসামিকে বাদ দিল আ.লীগ
>• আগে মনোনয়ন পান খায়রুল হুদা
• তিনি হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলার আসামি
• তাঁর জায়গায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মোবারক হোসেনকে
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। দলটি আগে খায়রুল হুদাকে এই পদের জন্য মনোনয়ন দিয়েছিল। গতকাল বুধবার তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে মোবারক হোসেনকে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং সুনামগঞ্জ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি খায়রুল হুদাকে। তিনি হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলার আসামি। খায়রুল হুদা দলীয় প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন। কিন্তু গতকাল তাঁর স্থলে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোবারক হোসেনকে।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। মোবারক হোসেনের পক্ষে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত দলীয় মনোনয়নের চিঠি তাঁরা হাতে পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খায়রুল হুদা সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলার আসামি। ২০১৭ সালে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির কারণেই হাওরে বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ফসলহানি ঘটে এবং বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। সার্বিক দিক বিবেচনায় কেন্দ্র তাঁকে বাদ দিয়ে মোবারক হোসেনকে এখানে দলীয় প্রার্থী করেছে।’
খায়রুল হুদা সুনামগঞ্জের হাওরে ২০১৭ সালের বন্যায় ব্যাপক ফসলহানির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার আসামি ছিলেন। তবে ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক ৩৩ জনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয়, সেখানে খায়রুল হুদার নাম বাদ দেওয়া হয়। যদিও অভিযোগপত্রটি এখনো বিচারিক আদালতে দাখিল করা হয়নি। খায়রুল হুদা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির মামলায় তাঁর আসামি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে খায়রুল হুদার মুঠোফোনে গতকাল বুধবার একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে এখনো কোনো কিছুই জানি না।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চারজন। খায়রুল হুদা ও মোবারক হোসেন ছাড়া অপর দুজন হলেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মনিষ কান্তি দে মিন্টু ও রাশেদ বখত। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ওই বছরের ২ জুলাই সুনামগঞ্জ সদর থানায় দুদকের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। এই মামলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৫ জন কর্মকর্তা ও বাঁধের কাজের ৪৬ জন ঠিকাদারকে আসামি করা হয়। মামলার আসামির তালিকায় খায়রুল হুদার নাম রয়েছে। মামলার দিনই ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন সুনামগঞ্জ পাউবোর তৎকালীন বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দিন ও ঠিকাদার মো. বাচ্চু মিয়া। এরপর ১৫ আগস্ট রাতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন খায়রুল হুদা। বর্তমানে তাঁরা জামিনে আছেন।