তাঁরা যখন ‘এক্সট্রা প্লেয়ার’
প্রধান দুই দল থেকে চারজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ফরিদপুর পৌরসভার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
ফরিদপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের দলীয় প্রার্থীরা গত রোববার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এই তিন দল থেকে চারজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া মোট আটজনের মধ্যে বাকি একজন শহরের হাড়োকান্দি হাবেলি রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়া নেতারা বলছেন, তাঁরা মূলত ‘এক্সট্রা প্লেয়ার’ হিসেবে মনোনয়ন জমা ও নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন কোনো কারণে বাতিল হয়ে গেলে সে সুযোগ নিতে চান।
রোববার দুপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অমিতাভ বোস মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর আগে গত শনিবার স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন ফরিদপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ মাহাতাব আলী।
মাহতাব আলী বলেন, ‘স্বতন্ত্র হলেই দলের ভেতর “বিদ্রোহী” প্রার্থী রব ওঠার প্রচলন আছে। কিন্তু আমি স্বতন্ত্র। স্বতন্ত্র হচ্ছে সর্বদলীয়, দলনিরপেক্ষ প্রার্থী।’
বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। তিনি ফরিদপুর-৩ আসনের সাবেক সাংসদ চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে। তিনি রোববার মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর একে একে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এ এফ এম কাইয়ুম জঙ্গী, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে কিবরিয়া ও মহানগর যুবদলের সভাপতি বেনজীর আহমেদ তাবরিজ।
বেনজীর আহমেদ তাবরিজ বলেন, ‘আমি বিদ্রোহী নই। বলা যায়, এক্সট্রা প্লেয়ার কিংবা ডামি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। দলীয় মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাইকালে কোনো সমস্যা হলে ঢাল হিসেবে কাজ করব।’
একই রকম কথা বলেন এ কে কিবরিয়াও। বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনের অংশ হিসেবে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাদ দেওয়া হলে আমাদের প্রার্থিতা তখন কাজে দেবে। আমরা তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থী নই। এটি নির্বাচনী রণকৌশলমাত্র।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নেতারা বলছেন, দলীয় প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হলে তাঁরা সে সুযোগ কাজে লাগাবেন।
তবে এ এফ এম কাইয়ুম জঙ্গী বলেন, পৌরসভার মতো নির্বাচনে নিজেকে ‘ডামি প্রার্থী’ হিসেবে আখ্যায়িত করাটা হাস্যকর। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন বলেই প্রার্থী হয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়া খন্দকার তৌফিক এনায়েত শহরের হাড়োকান্দি হাবেলি রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা। তাঁর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আবদুস সালাম।
আজ মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র বাছাই হওয়ার কথা। আগামী ১০ ডিসেম্বর ফরিদপুর পৌরসভার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিন মধুখালী পৌরসভারও ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা। এই পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে মোট তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খন্দকার মোরশেদ রহমান, মধুখালী পৌর বিএনপির সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মির্জা মিলন। মধুখালী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৪ এবং সংরক্ষিত ৩টি মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম জানান, বর্ধিত ফরিদপুর পৌরসভার ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মোট ২০৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া ৯টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ৫২ জন।
আমাদের গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী, প্রতিনিধি জানান, ১০ ডিসেম্বর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। রোববার সকালে উপজেলা নির্বাচন অফিসে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা স্বপন সাহা ও নির্বাচন কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন আহমেদের কাছে প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান এ বি এম নুরুল ইসলামের ছেলে মো. আরিফুজ্জামান এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মাহবুবুর রাব্বানী মনোনয়নপত্র জমা দেন। তাঁরা প্রত্যেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
গত ২৯ মার্চ এই উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে ভোট গ্রহণের চার দিন আগে তা স্থগিত করা হয়। তখন উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা মুন্সী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মণ্ডল (ঘোড়া) ও বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহাবুব আলম (ধানের শীষ) প্রচারণা চালান।