ঢাবিতে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও ছাত্রলীগ
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদের এক বক্তব্যের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন ছাত্রদল নেতারা। তবে হামলার কথা অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্রদলের শিষ্টাচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের ‘প্রতিবাদ’ জানিয়ে থাকলে তাঁরা সেটিকে স্বাগত জানান।
রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এই হামলার ঘটনা ঘটে৷ হামলায় আতিক মোর্শেদ নামের এক ছাত্রদল কর্মী আহত হয়েছেন৷ এ ছাড়া আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রদল৷
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘হত্যার হুমকি’ দিয়েছেন অভিযোগ করে রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্রদল৷ সেখানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের হৃদয়ে আঘাত করেছেন৷ আমাদের আদর্শিক মাকে নিয়ে তিনি কটূক্তি করেছেন৷ তাই আমরা উত্তপ্ত৷
আমাদের আবেগ, আমাদের আদর্শিক মা খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করার চেষ্টা করবেন না৷ সৎ সাহস থাকলে পারলে ছাত্রদলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করুন৷’
ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের ওই বক্তব্যের ভিডিও দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে৷ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা ফেসবুকে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদককে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। ক্ষমা না চাইলে তাঁকে ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়ার ঘোষণা দেন তাঁরা। এরপরই সন্ধ্যায় টিএসসিতে হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রথমে টিএসসির জনতা ব্যাংকের সামনে ছাত্রদল কর্মী আতিক মোর্শেদকে মারধর করেন৷ এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মানসুরা আলমও লাঞ্ছিত হন৷ পরে টিএসসির প্রধান ফটকের সামনে ছাত্রদলের আরেক কর্মীকে মারধর করা হয়৷ পরে টিএসসি এলাকায় কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়ালিউল সুমনের নেতৃত্বে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মিছিল হয়৷ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল প্রমুখ পেছনে থেকে নেতৃত্ব দেন৷
ছাত্রলীগের হামলায় আতিক মোর্শেদ নামের ছাত্রদলের এক কর্মী ঘাড়ে আঘাত পেয়েছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান৷ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে নিয়ে আমাদের সাধারণ সম্পাদক কোনো অপমানজনক বক্তব্য দেননি। গঠনমূলক সমালোচনা করেছেন৷ ছাত্রলীগ যে হামলা করেছে, তা পৈশাচিক ও শিষ্টাচারবহির্ভূত৷’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, ছাত্রদলের ওপর ‘হামলার প্রশ্নই আসে না’ এবং ছাত্রদলকে তাঁরা গণতান্ত্রিকভাবে মোকাবিলা করতে চান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদল সাংগঠনিকভাবে খুন ও সন্ত্রাসের রাজনীতির চর্চা করে থাকে৷ তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ বোধ করছেন।
ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতাদের বক্তব্যে আমরা যে ধরনের শিষ্টাচার দেখি, সেটি খুনি ও দণ্ডপ্রাপ্ত উচ্চমাধ্যমিক পাস না করা একজন জাতীয় নেতা এবং অষ্টম শ্রেণি পাস প্রধানমন্ত্রীর মানদণ্ডেরই উপযুক্ত৷ ছাত্রদলের এসব কর্মকাণ্ড, উসকানিমূলক বক্তব্য-বিবৃতি এবং অছাত্র-বহিরাগতদের কাছে ছাত্ররাজনীতির ঠিকাদারি দেওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ওপর শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আছে৷
শিক্ষার্থীরা আমাদের ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে, প্রশাসনকেও বলেছে৷ সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে যদি প্রতিবাদ জানান, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই।’