ডাক এলেও সাড়া দেবে না বিএনপি

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে আহ্বান জানানোর কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, ডাক এলেও তাঁরা সাড়া দেবেন না। এর আগে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপেও বিএনপি অংশ নেয়নি।

এখন পর্যন্ত দলটির নীতিগত অবস্থান হচ্ছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় বসবে না। আলোচনা হবে শুধু নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়—এটাই তাদের মূল দাবি।

বিএনপির নেতারা বলছেন, সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এখন যে সংলাপের কথা বলেছেন, কিংবা আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিরপেক্ষ করার বিষয়ে যে কঠোরতার আভাস দিচ্ছেন, তার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এটি মূলত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশলের অংশ।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যখন এই নির্বাচন কমিশন তৈরি করা হয়, আমরা প্রথম থেকেই এর কিছুতেই সম্পৃক্ত নই। আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। এই সরকার পদত্যাগ করবে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে, সেই সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না।’ তবে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা এ-ও বলেন, যখন সংলাপের প্রস্তাব আসবে, নিশ্চয়ই দল তখন সিদ্ধান্ত নেবে।
সাভার উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনে শুক্রবার সকালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ সব দলকে সংলাপে ডাকার কথা বলেন।

বিএনপির কাছে আস্থা অর্জনের জন্য ইসি কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা কমিশন সিদ্ধান্ত নেব—কীভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান করব, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব। অচিরেই বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানাব।’

কবে নাগাদ এটি হতে পারে, এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, এটা ঠিক করে বলা যাচ্ছে না। হয়তো দু-এক মাসের মধ্যে হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের পদক্ষেপকে দেশের নাগরিকদের ‘অ্যাজেন্ডা–বহির্ভূত’ বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশের মানুষের একমাত্র অ্যাজেন্ডা হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এটা রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা, এটা সিইসির দায়িত্বে পড়ে না। সুতরাং এ নিয়ে ইসির সঙ্গে বসা, কথা বলা হবে নিরর্থক।’

অবশ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তাঁর কমিশন কোনো মন্তব্য করবে না।

নির্বাচনকালীন সরকার যে একটি রাজনৈতিক ইস্যু, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেছিলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আমরা কিছুই বলব না। কারণ, আমরা শপথ নিয়েছি, আইন ও সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছি। যে কাজগুলোর কথা বলছেন, সেগুলো রাজনৈতিক ব্যাপার, সেটা তারা (রাজনৈতিক দলগুলো) তাদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’

বিএনপি নেতারাও মনে করেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে সমাধানে না আসা পর্যন্ত ইসির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। তাঁরা বলছেন, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে—এটাই শেষ কথা। এরপর নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে, তারাই ঠিক করবে নির্বাচন কীভাবে হবে। এটাই হচ্ছে দলীয় অবস্থান। এই অবস্থান ধরেই এবার তারা ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ডাকা সংলাপে অংশ নেয়নি।

এটাকে ভিত্তি ধরেই বিএনপি রাজপথে সরকারবিরোধী একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে। এখন এ অবস্থানের বাইরে নির্বাচন প্রশ্নে ইসির সঙ্গে আলোচনায় বসায় হবে দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, দেশে এখন যে সমস্যা, তা হচ্ছে নির্বাচনী পদ্ধতি কী হবে, নির্বাচনকালে সরকারে কে থাকবে। এটা প্রমাণিত যে নির্বাচনের সময় কেয়ারটেকার সরকার যদি না থাকে, সে নির্বাচন অর্থবহ হবে না। সুতরাং এখানে ইসির সঙ্গে আলোচনার তো কোনো বিষয় নেই।