ডাইনিং থেকে নিয়োগ, সব তাঁর হাতে

ছাত্রলীগের এই নেতা আলোচনায় এসেছেন হলের বিশেষ খাবারের আয়োজনের টাকা নিজের হাতে নিতে না পেরে হল প্রাধ্যক্ষকে গালিগালাজ করে।

  • পছন্দের শিক্ষককে নিয়োগ দিতে রাকিবুল হাসান তৎকালীন উপাচার্যকে চাপ দিয়েছিলেন।

  • সর্বশেষ ছাত্রী হলের খাবার নিয়ে প্রাধ্যক্ষকে গালিগালাজ করেছেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
ফাইল ছবি

হলের ক্যানটিনে ‘ফাও’ খাওয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের জোর করে ক্লাস থেকে মিছিল নেওয়া, শিক্ষক নিয়োগে প্রভাব বিস্তার, এমনকি শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি ছাত্রলীগের এই নেতা আলোচনায় এসেছেন বিজয় দিবসে ছাত্রী হলের বিশেষ খাবারের আয়োজনের টাকা নিজের হাতে নিতে না পেরে হল প্রাধ্যক্ষকে গালিগালাজ করে ও হুমকি দিয়ে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে পরে প্রাধ্যক্ষসহ চার শিক্ষক পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হুমকির মুখে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে প্রাধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করেন। প্রাধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে আনসার সদস্য বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাকিবুল হাসানের এমন ‘দাপট’ আরও চার বছর আগে থেকেই শুরু হয়। ২০১৭ সালের মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন রাকিবুল। এর পর থেকেই হলের ডাইনিংয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দিতে তদবির, জোর করে ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে মিছিলে নেওয়া, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির নির্বাচন পণ্ড করে দিয়ে নিজের পছন্দের ছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠন করার অভিযোগ রয়েছে রাকিবুল হাসান ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের ডাইনিং পরিচালনায় নিজের পছন্দের লোককে দিয়েছেন। রাকিবুলের অনুসারী কিছু ছাত্র বিনা টাকায় খান বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগেও নিজের আধিপত্য বজায় রাখেন রাকিবুল হাসান। গত অক্টোবর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তার নিয়োগ হয়। তখন নিজের পছন্দের এক শিক্ষককে নিয়োগ দিতে রাকিবুল তৎকালীন উপাচার্য এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানকে চাপ দেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ওই শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে রাকিবুল হাসান তৎকালীন উপাচার্যকে কোনো চাপ দিয়েছিলেন কি না, জানা নেই।

গত অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন প্রকৌশলী নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে রাকিবুল হাসানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয় উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল ইসলামের। এর কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যার কারণে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রকৌশলী মাহবুবুল ইসলামের কক্ষে ঢুকে তাঁকে হেনস্তা করেন। এ বিষয়ে ‍মাহবুবুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ করলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুল হাসান বলেন, সম্প্রতি প্রাধ্যক্ষ সিরাজাম মুনিরা যে অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন, সেটি একেবারে মিথ্যা। উপপ্রধান প্রকৌশলী মাহবুবুল ইসলামকে হেনস্তা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে। এর বেশি আমার কিছু জানা নেই।’ শিক্ষক নিয়োগের জন্য চাপ প্রয়োগের বিষয়ে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করা একজন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। আমি তাঁর জন্য সামান্য সুপারিশ করেছি। কোনো চাপ দিইনি।’

প্রসঙ্গত, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের জন্য উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোলনচাঁপা হল কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে রাকিবুল হাসান ১৪ ডিসেম্বর সব টাকা তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দোলনচাঁপা হলের প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরাকে হুমকি দেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।