মাদারীপুর ইউপি নির্বাচন
‘জালিয়াতির’ তালিকা থেকে মনোনয়ন, তৃণমূল উপেক্ষিত
তৃণমূল বলছে, অদৃশ্য শক্তির বলে তালিকা পরিবর্তন হয়ে গেছে। ১৩টি ইউনিয়ন থেকে তৃণমূলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা বঞ্চিত হয়েছেন।
মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। দুই উপজেলার তৃণমূল পর্যায় থেকে পাঠানো তালিকা দলের মনোনয়ন বোর্ডে জালিয়াতির মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।
তাঁদের দাবি, অদৃশ্য শক্তির কারণে তৃণমূলের পাঠানো তালিকা পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফলে ১৩টি ইউনিয়ন থেকে তৃণমূলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা মনোনয়নবঞ্চিত হলেন। মনোনয়ন পেয়েছেন দল থেকে বহিষ্কৃত ও অব্যাহতি পাওয়া এবং বিএনপির সাবেক নেতাসহ দলের হাইব্রিডরা।
কালকিনির পাশের উপজেলা ডাসার। গত ২৬ জুলাই ডাসারকে উপজেলা ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করে জেলা কমিটি। নতুন উপজেলা হওয়ায় ডাসারে কালকিনি উপজেলার অধীনেই ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই উপজেলা থেকে পৃথক চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নামের প্রস্তাব জেলা কমিটির কাছে পাঠায় উপজেলা আওয়ামী লীগ। তবে তৃণমূলের তালিকা থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা।
মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর একটি আবেদন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, কালকিনি উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগ ৪৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকা জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠায়। একই সঙ্গে ডাসারের ৫টি ইউনিয়ন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগ ২৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম জেলা আওয়ামী লীগে পাঠায়। পরে জেলা আওয়ামী লীগ সে তালিকা দুটি সই করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠায়। জেলা কমিটি তালিকা পাঠানোর পরে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেকটি পক্ষ কালকিনি ও ডাসার দুটি উপজেলাকে একত্রিত করে আরও একটি তালিকা তৈরি করে সরাসরি কেন্দ্র পাঠায়।
কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রথম সারির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বাদ দিয়ে তৃতীয় সারির ব্যক্তিরা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে বিতর্ক বেশি ডাসারে। ডাসার উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থাকার পরও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহিন সেই কমিটিকে পাশ কাটিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় সই নিতে আমার কাছে আসে। আমি তাতে সই দিইনি।’
কালকিনি উপজেলা থেকে দুবার তালিকা পাঠাল কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তাহমিনা সিদ্দিকী বলেন, ‘ডাসারকে নিয়ে আরেকটি তালিকা তারা (আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ) নিজেরা তৈরি করে নিয়েছে। সাংসদ আবদুস সোবহান মনোনয়ন বোর্ডে রয়েছেন। তিনি তাঁর লোক দিয়ে এটি তাঁর মতো করেছেন।’
দ্বিতীয় দফায় পাঠানো তালিকা থেকে ডাসার উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়নে যাঁরা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁরা হলেন বালিগ্রাম ইউনিয়নের ইসতিয়াক হোসেন খান, কাজীবাকাই ইউনিয়নের সাইদুল ইসলাম, গোপালপুর ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেন, ডাসার ইউনিয়নের রেজাউল করিম শিকদার ও নবগ্রাম ইউনিয়নের বিভূতিভূষণ বাড়ৈ।
জানতে চাইলে মাদারীপুর-৩ আসনের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবাহান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালকিনি উপজেলা থেকে দুটি মনোনয়ন কেন গেল ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন জালিয়াতি নিয়ে যাঁরা কথা বলেছেন, সেটা তাঁরাই জানেন। এগুলো আমার জানা নেই।’