ছাত্রলীগের হামলায় আহত ছাত্রদলের ৪৭ জনের নাম জানাল বিএনপি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের ৪৭ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহত নেতা–কর্মীদের একটি তালিকা দেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানানো হয়।
গুরুতর আহত ব্যক্তিরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আকতার হোসেন, সদস্যসচিব আমান উল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম ও শাকির আহমেদ, বিজয় ৭১ হলের যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আজাদি, ছাত্রদল নেতা শাহীনুর রহমান, সাহাবুদ্দিন আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম, নাহিদ চৌধুরী ও রাজু হাসান। তাঁদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত অন্যরা হলেন ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক এইচ এম আবু জাফর, সদস্য নাছির উদ্দিন শাওন, এফ এইচ হল শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, জিয়া হলের সভাপতি তারেক হাসান মামুন, বিজয় ৭১ হল শাখার সভাপতি সোহেল রানা, ছাত্রদল নেতা সালেহ মো. আদনান, আতিক মোর্শেদ, নাছির উদ্দিন নাছির, আবদুল্লাহ আল মাসুদ, মো. মানিক হোসেন, বাহারুল ইসলাম, রেজাউল করিম, সজীব রায়হান, শামীম আকন, ইজাবুল মলিক, সরদার মিলন, জুবায়ের আল মাহমুদ, নাজমুল ইসলাম বাহার, মাসুদ রানা রিয়াজ, আরিফ মোল্লা, আবুল হোসেন হাওলাদার, রিমু হোসেন, কাওছার হোসেন, শামীম হোসেন, সাইফুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান আসলাম, গোলাম মওলা, রাকিব ইসলাম আলভী, সজীব হাওলাদার, এস এম শামীম হোসেন, করিম প্রধান, আতাউর রহমান খান, নাহিদ শাহ পাটোয়ারি, জান্নাতুল ফেরদৌস, কাজী রফিকুল ইসলাম ও আতাউর রহমান।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর শমরিতা হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রদল নেতাদের দেখতে যান। শমরিতা হাসপাতালে আহত নেতাদের দেখে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলায় ছাত্রদলের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হত্যার হুমকি দেওয়ার পর সারা দেশে যে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, তা সামাল দেওয়ার জন্য তারা (ছাত্রলীগ) সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। এটাই হচ্ছে ফ্যাসিবাদের চরিত্র। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এভাবে সন্ত্রাস করে কোনো দিন ক্ষমতায় থাকা যায় না।’
সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা রড, হকিস্টিক, রামদা ও দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। হামলা থেকে ছাত্রদলের নেত্রীরাও রেহাই পাননি। ছাত্রদল নেতারা হাইকোর্ট চত্বরে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানেও রক্তাক্ত হামলা চালানো হয়। হামলা থেকে সাধারণ আইনজীবীরাও রক্ষা পাননি। ছাত্রলীগের হামলায় আজ সুপ্রিম কোর্টও রক্তাক্ত হয়েছে।
ঢাকায় ছাত্রদলের ওপর হামলার পাশাপাশি খুলনা, নড়াইল, কুষ্টিয়া ও পটুয়াখালীতে বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে ‘প্রধানমন্ত্রীর কটূক্তির’ প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, খুলনায় বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের হামলায় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রধান অতিথি ছিলেন। সমাবেশ থেকে খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম, মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রেহানা আক্তারসহ ১০–১২ নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
এ ছাড়া নড়াইলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে ভাঙচুর করেন। পরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সেখানেও হামলা করে অন্তত ৫০ জনকে আহত করা হয়। পটুয়াখালীতেও সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় মৎস্যজীবী দল নেতা আরাফাত জাহানসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। কুষ্টিয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশের উদ্দেশে রওনা হলে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাসীরা’ হেলমেট পরে রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে তাঁদের মারধর করেন বলেও অভিযোগ রিজভীর।