গণতন্ত্রের রকমফের

গণতন্ত্র রক্ষা, গণতন্ত্র হত্যা বা স্বৈরাচারের পতন নামে দেশে একাধিক দিবস পালন করছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের সুবিধা অনুযায়ী এই দিবসগুলো পালন করে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস, ৩০ মার্চ স্বৈরাচার পতন দিবস, ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস ও গণতন্ত্র হত্যা দিবস এবং ১১ জানুয়ারি কালো দিবস। গণতন্ত্র নিয়ে এসব দিবস পালন করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান পরস্পর বিপরীতমুখী।
৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস: ১৯৯০ সালের এই দিনে গণ-আন্দোলনের মুখে সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এ দিবসটি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—উভয়ই স্বৈরাচারের পতন দিবস হিসেবে পালন করে।
তবে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় বিএনপি জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছিল। তখন বিএনপি এ দিবসটি নিয়ে নীরব ছিল। আর আওয়ামী লীগ এরশাদের পতন দিবসটি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করত।
এখন বর্তমান আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকারে আছে জাতীয় পার্টি। গত ৬ ডিসেম্বর দেখা গেছে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নীরব। কোনো কর্মসূচি পালন করেনি দলটি। কেবল দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা একটি বিবৃতি দিয়েছেন। আর বিএনপি দিবসটি কর্মসূচির মাধ্যমে ঘটা করে পালন করে।
এরশাদের জাতীয় পার্টি এ দিবসটিকে ‘সংবিধান সংরক্ষণ’ দিবস হিসেবে পালন করে। দলটির বক্তব্য, সংবিধানকে সমুন্নত রাখা এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এরশাদ সেদিন পদত্যাগ করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন।
৩০ মার্চ স্বৈরাচার পতন দিবস: ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একদলীয় ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তবে আওয়ামী লীগের তীব্র আন্দোলনের মুখে ওই বছরেরই ৩০ মার্চ খালেদা জিয়ার সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়। আওয়ামী লীগ এই দিনটিকেও স্বৈরাচার পতন দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় ও গণতন্ত্র হত্যা দিবস: এবারই প্রথম দিবসটি পালিত হতে যাচ্ছে। গত বছরের ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। সংবিধান রক্ষার জন্য এ নির্বাচন করতে হয়েছে বলে দাবি করে দলটি। তারা কাল ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ দিবস হিসেবে পালন করার জন্য ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ ও আনন্দ শোভাযাত্রার কর্মসূচি নিয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে। দুটি দলটি তাদের অন্য শরিকদের নিয়ে আওয়ামী লীগের অধীনে ওই নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন করেছিল। এ উপলক্ষে রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত সরকার তার অনুমতি দেয়নি। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এই দিনটিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ও গণ-অধিকার রক্ষা দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে তারা দলীয় সমাবেশ ও মিছিল করবে।
১১ জানুয়ারি কালো দিবস: ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত কয়েক বছর বিএনপি দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করেছে। বিএনপি-সমর্থিত ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ‘সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ গঠনের প্রতিবাদে ১১ জানুয়ারি পালন করে দলটি।