খালেদা বেশি ভুগছেন লিভারের সমস্যায়
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হার্ট, কিডনিসহ অনেক শারীরিক জটিলতা রয়েছে। তবে তিনি এখন লিভারের সমস্যায় বেশি ভুগছেন। এ ছাড়া তাঁর ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত। হিমোগ্লোবিনের সংকট রয়েছে। রক্তচাপও ওঠানামা করছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্প্রতি রক্তবমি করার পর খালেদা জিয়ার লিভার থেকে রোগ পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয়।
বিএনপির নেতারা জানান, সব মিলিয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালো নয়। ইতিমধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন খালেদা জিয়া। দ্রুত বিদেশে তাঁর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
খালেদা জিয়াকে দেখতে গত শুক্রবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপির মহাসচিব। রাত সোয়া নয়টার দিকে তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি আগের দিনের মতোই রয়েছে বলে চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়েছেন।
এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগের দাবিতে আজ শনিবার ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও মহানগরে গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ঢাকায় গণ-অনশন হবে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত এপ্রিলে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। করোনা থেকে সেরে উঠলেও নানা জটিলতায় তাঁকে দুই দফা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে ইতিমধ্যে তাঁর পরিবার, নিজ দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার রাজি নয়। এ অবস্থায় গতকাল ঢাকায় এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে ‘জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার’ চক্রান্ত চলছে।
বিএনপির মহাসচিব সরকারের উদ্দেশে আরও বলেন, তাদের লক্ষ্য একটাই। তারা খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে এখন জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, চক্রান্ত করছে। সে কারণে তারা তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগটাও দিতে চাইছে না।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গতকাল সকালে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ওই আলোচনা সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘গতকালও আইনমন্ত্রী বললেন, এখানে কোনো আইনেই সুযোগ নেই তাঁকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে পাঠানোর। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। আইনে সুযোগ রয়েছে। ওই যে তাঁরা আইনের কথা বলছেন ৪০১, সেই ৪০১-এর মধ্যেই বলা আছে সম্পূর্ণ এখতিয়ারটা সরকারের।’ তিনি বলেন, সরকার চাইলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে। সরকার চাইলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পারে।
উল্লেখ্য, আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, খালেদা জিয়াকে দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ আইনে নেই। এ প্রসঙ্গে বিএনপির নেতারা সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও ১৯৭৯ সালে আ স ম আবদুর রব ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ নাসিমের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করছেন।
কর্মসূচি
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে তাঁর সুচিকিৎসার দাবিতে আজ সারা দেশে বিএনপি যে গণ-অনশন কর্মসূচি ডেকেছে, তা সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীরা গণ-অনশনে বসবেন। দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকায় অনশন কর্মসূচির জন্য মহানগর নাট্যমঞ্চ ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু অনুমতি পাওয়া যায়নি।
গণ-অনশনে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা অনেক জায়গা চেয়েছিলাম। তারা জায়গা দেয়নি। আমরা আশা করব, সবাই আমাদের এই গণ-অনশনে একাত্মতা ঘোষণা করবেন।’
গণ-অনশন থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলন ছাড়া কোনো মতেই এ দানবীয় সরকারকে সরানো সম্ভব হবে না।’