খালেদা জিয়াকে নতুন কোনো ব্যবস্থাপত্র দেয়নি মেডিকেল বোর্ড
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অবস্থার উন্নতি বা অবনতি হয়নি। আগের মতোই আছেন তিনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোনো ব্যবস্থাপত্র চিকিৎসকেরা দেননি। আগের চিকিৎসাই অব্যাহত রয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন সিসিইউতে আছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই। তবে এই চিকিৎসক বলেন, গত ৩ মে থেকে তিনি সিসিইউতে আছেন। গত চার দিনে অবস্থার কিছুটা উন্নতি তাঁরা আশা করেছিলেন। সেটি হয়নি। তবে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতিও হয়নি।
এই চিকিৎসক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে সময় সময়ে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস রাখা যাচ্ছে না। শরীরে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা (অক্সিজেন স্যাচুরেশন) কখনো কখনো কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অবশ্য অক্সিজেন দিলে মাত্রা ৯৯ উঠছে। তাঁর মানে তিনি অক্সিজেন পুরোপুরি নিতে পারছেন। এটা ভালো লক্ষণ।
চিকিৎসকেরা বলছেন, খালেদা জিয়ার করোনা–পরবর্তী বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা, ফুসফুসে তরল জমা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকা। এর বাইরে গত বুধবার তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেছিলেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেডিকেল বোর্ড দেখেছে, খালেদা জিয়ার কিডনিতে বিষাক্ত রক্ত জমছে। এ নিয়ে চিকিৎসকেরা উদ্বিগ্ন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এভার কেয়ার হাসপাতালে দশ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। বোর্ডের সদস্যরা একমত হয়েছেন যে, এই মুহূর্তে কিডনিতে রক্ত জমার ঝুঁকি কমানোর জন্য সংক্রমণটি নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার, যেন কিডনি আরও ভালোভাবে কাজ করে এবং রক্ত পরিষ্কার করতে পারে।
এদিকে সন্ধ্যায় বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন আজ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এই চিকিৎসক বলেন, এখনো সরকার তাঁকে (খালেদা জিয়া) বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। অনুমতি পেলে তাঁর জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা আগের চিকিৎসাপত্র অব্যাহত রেখেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, বিদেশ নেওয়ার মতো খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আছে কি না, এই প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক। কেননা এখনো তো সরকারের অনুমতি পাওয়া যায়নি। আগে অনুমতি পাক, এরপর চিকিৎসকেরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন। তিনি ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। ২৭ এপ্রিল রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। শ্বাসকষ্ট অনুভব করায় ৩ মে কেবিন থেকে তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এখনো সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
৫ মে আবারও শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা অনুভবন করেন। ওই দিন রাতেই তাঁর ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনটি এখন আইনমন্ত্রীর মতামতের অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে বেশ কিছু কাজ এগিয়ে রেখেছেন তাঁর পরিবার ও দল। তাঁকে কবে নাগাদ বিদেশ নেওয়া হতে পারে, সেটা নির্ভর করছে সরকারের অনুমতি ও খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনের ওপর।