ঐক্য ছাড়া বিজয় আসে না: নোমান
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ ইভিএম নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাঁরা আবার কারচুপি করে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু তাঁরা আদৌ নির্বাচন করতে চায় কিনা তা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন আছে। বিএনপি সত্যিকার অর্থে নির্বাচন চায়। সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বিএনপি সরকারকে বাধ্য করবে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দলীয় ও জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। ঐক্য ছাড়া বিজয় আসে না।
গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে নোমান এই বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন। দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন সংলগ্ন নুর আহমেদ সড়কে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবু্বুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু সুফিয়ান বক্তৃতা করেন।
বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল এই সমাবেশের আয়োজন করে নগর বিএনপি। চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল স্থানীয় বিএনপি। কিন্তু নগর পুলিশ প্রশাসন লালদীঘি মাঠের পরিবর্তে বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। বিএনপি নাসিমন ভবন সংলগ্ন নুর আহমেদ সড়কে যেকোনো প্রকারে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। গতকাল সকালে সড়কের ফুটপাথে মঞ্চ তৈরি করে সংগঠনটি। সমাবেশটি শেষ পর্যন্ত সড়কের এক পাশে হয়েছে।
গতকালের সমাবেশকে ঘিরে নগরের কাজীর দেউড়ি মোড়, আলমাস সিনেমা, আসকারদীঘি, লাভলেইন, আউটার স্টেডিয়াম ও জুবিলি রোড এলাকায় তিন শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নেভালের মুখে দেখা গেছে র্যাব সদস্যদের অবস্থান। গতকাল দুপুরের মধ্যেই পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল কাজীর দেউড়ি মোড়ে। ফলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহের পাশাপাশি আতঙ্কও ছিল।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল দুপুর থেকে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শত শত নেতা-কর্মীর স্রোত ছিল নুর আহমেদ সড়কের দিকে। বেলা তিনটায় সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায়।
গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটার মধ্যে কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে নাসিমন ভবনের প্রবেশমুখ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ গজ সড়কের এক প্রান্ত হাজারো নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে যায়। গত পৌনে চার বছরের মধ্যে গতকালই চট্টগ্রাম বিএনপি সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়। এর আগে একই জায়গায় ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি অনুরূপ একটি বড় সমাবেশের আয়োজন করেছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে ওই সময় সংঘর্ষ বেঁধে গেল বিএনপির ওই সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। ওই দিন তিন শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিল।
গতকালের সমাবেশে নোমান বলেন, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণকে ভয় পায় বলে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চাচ্ছে না। তাঁরা জনগণকে গুম-খুন উপহার দিয়েছে। তাই এই মুহূর্তে দলীয় ও জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। ঐক্য ছাড়া বিজয় আসে না। জনগণ নিজেদের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তুত। দেশের পরিস্থিতি ভালো নেই। একটি বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। কিন্তু বিএনপি বিশৃঙ্খলা চায় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে ছাড়বে বিএনপি।
ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেছেন, দেশের মানুষ ‘সিলেক্টেড’ প্রধানমন্ত্রী নয়, ইলেক্টেড’ প্রধানমন্ত্রী চায়। এ জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন প্রয়োজন। কিন্তু আওয়ামী আবার কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট করতে চাচ্ছে। জনগণ তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেবে না। চট্টগ্রাম থেকে গণমিছিল বের করতে হবে। সেই গণমিছিলকে গণ-অভ্যুত্থান পরিণত করে আওয়ামী লীগকে বিদায় করে দিতে হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ নাকি এক-এগারোর গন্ধ পাচ্ছে। এই এক-এগারো আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফল। কিন্তু নির্জন কারাগার থেকে খালেদা জিয়ার বের হওয়ার গন্ধ কি তাঁরা পাচ্ছেন? দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে জনগণের গড়ে ওঠা আন্দোলনের গন্ধ কি আওয়ামী লীগ পাচ্ছে? আওয়ামী লীগের মনে রাখা উচিত, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। বিএনপি সে নির্বাচন করতে দেবে না। ২০১৪ আর ২০১৮ সাল এক নয়।
নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ১০০ আসনে কারচুপি করতে দেড় লাখ ইভিএম যন্ত্র কেনার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কিন্তু নেদারল্যান্ডসসহ উন্নত দেশে ইভিএম পদ্ধতি বাতিল হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে দেবে না।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, বিএনপি সাগরের উত্তাল তরঙ্গের মতো। উত্তাল তরঙ্গ যেমন ঠেকানো যায় না তেমনি বিএনপিকেও বুলেট-বারুদ দিয়ে ঠেকানো যাবে না।