বেগম খালেদা জিয়ার সফরের কারণে নানা উপদলে বিভক্ত চট্টগ্রাম বিএনপির নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন পর এক মঞ্চে এসেছেন। উজ্জীবিত নেতা-কর্মীরা এখন নিজেদের মধ্যেকার বিভেদকে ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে চান। অন্তত আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দলের এই ঐক্য ও সংহতি ধরে রেখে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিতে চান তাঁরা।
গত ৩০ অক্টোবর সড়কপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের দেখতে যান বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যাত্রাপথে ২৮ অক্টোবর ও ৩০ অক্টোবর দুই রাত তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অবস্থান করেন। তাঁর সফরকে ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় বিএনপির লাগাতার হরতাল চলছিল। কিন্তু হরতালের সমর্থনে বিএনপি তখন রাস্তায় কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। পুলিশ তাঁদের মাঠে নামতে দেয়নি। এরপরেও বিএনপি চট্টগ্রামে বড় কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। ফলে দীর্ঘসময় এক প্রকার ঘরোয়া কর্মসূচি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল স্থানীয় বিএনপি। এ ছাড়া নিজেদের মধ্যে কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বও নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল। নির্বাচনকে সামনে রেখে গত মে মাসে পৃথকভাবে কর্মিসভার আয়োজন করেছিল চট্টগ্রাম নগর, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। কিন্তু কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বে উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কর্মিসভা পণ্ড হয়ে যায়। এতে হতাশা তৈরি হয়েছিল চট্টগ্রাম বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার চট্টগ্রামের আগমনের পর সবাই এক কাতারে আসায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও চাঙাভাব তৈরি হয়েছে। সফরের মধ্যে বিবদমান নেতারা সবাই একসঙ্গে রাস্তায় ছিলেন
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দলের ঐক্য ও সংহতি ধরে রাখতে চাই। খালেদা জিয়ার সফরের কারণে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের নেতা-কর্মীরা আরও সংগঠিত হয়েছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। সড়কপথে বেগম খালেদা জিয়ার সফরের মাধ্যমে আবার প্রমাণিত হয়েছে বিএনপি আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী। খালেদা জিয়ার এ সফরে কোনো পথসভা, জনসভা কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে তাঁকে অভিবাদন জানিয়েছে। বেশ উৎফুল্ল তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। চট্টগ্রাম বিএনপি এখন আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, খালেদা জিয়ার সফরের কারণে ঘরের প্রতিটি সদস্যের মনোবল অটুট।
এদিকে খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর শেষ হওয়ার পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিবদমান পক্ষগুলো আজ শনিবার বিকেলে আসলাম চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে সমাবেশ করবে। আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। আসলাম চৌধুরীর প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরাও সমাবেশে যোগ দিতে পারেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এর আগে গত ২ মে নগরের নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে কর্মিসভায় মঞ্চ দখল নিয়ে আসলাম চৌধুরী ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও চাকসু ভিপি মো. নাজিম উদ্দিন গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সফরের কারণে দলের ঐক্য আরও মজবুত হয়েছে। বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিবদমান নেতা-কর্মীরা আসলাম চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে আগামীকাল (আজ শনিবার) এক মঞ্চে উপস্থিত হবেন। এটাই চট্টগ্রাম বিএনপির বড় প্রাপ্তি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী খালেদা জিয়াকে যেভাবে অভিবাদন জানিয়েছেন তা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের সড়কের দুদিকে উপস্থিতি একটি সংকেত। এটা আওয়ামী লীগকে উপলব্ধি করতে হবে।