এখন যুক্তফ্রন্টের মুখে 'ধাপে ধাপে ভারসাম্য' আনার কথা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জোটগুলোর মধ্যে ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ আনা এবং জোটে পর্যাপ্ত আসন পাওয়ার বিষয়টি এবার সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়। বিশেষ করে বিকল্পধারা বাংলাদেশ ‘ক্ষমতার ভারসাম্যের রাজনীতি’ কথাটিতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিল। তবে আসনপ্রাপ্তিতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় কেউই সুবিধা করতে পারেনি।
মহাজোটে যোগ দিয়ে তিনটি আসনে ছাড় পাওয়া বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট এখন বলছে, তারা ধাপে ধাপে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আসবে। যদিও বিএনপির সঙ্গে জোটে যেতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার শর্ত দিয়েছিল এই জোট।
প্রতিবারের মতো এবারও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট গড়ার তোড়জোড় শুরু হয়। বিএনপির নেতৃত্বে এ বছরের মাঝামাঝি থেকে একটি সরকারবিরোধী জোট গঠন করার আলোচনা শুরু হয়। তাতে আগে থেকেই জোটভুক্ত হওয়া বিকল্পধারা বাংলাদেশ, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি মিলে যুক্তফ্রন্ট এ আলোচনায় শামিল হয়। সঙ্গে যোগ দেয় গণফোরাম। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রথম দিকে থাকলেও তারা মহাজোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা চালায়। অবশ্য পরে তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দিকেই যায়।
চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে এসে বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপি ও গণফোরামের একাধিক বৈঠক হয়। বিকল্পধারা সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তাঁর ছেলে এবং দলের মুখপাত্র মাহী বি. চৌধুরীও কোনো একটি দলকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে ক্ষমতায় বসাতে চায় না বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই দলগুলোর মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও তারা কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। জোট গঠন করতে বিকল্পধারা বিএনপিকে ১৫০ এবং অন্য শরিকদের জন্য ১৫০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার আগাম সমঝোতা চেয়ে বসে। ক্ষমতায় গেলে যেন ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ আসে, সেটাই ছিল এই দাবি করার পেছনে মূল কারণ। অবশ্য এই দাবির সঙ্গে বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ারও শর্ত দেয় যুক্তফ্রন্ট।
গত ১৩ অক্টোবর বিকল্পধারাকে ছাড়াই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বাকি দলগুলো মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। সেদিন বি. চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘একটি পদ্ধতি করতে চেয়েছিলাম, যার মাধ্যমে একটি দল ১৫০ আসনের বেশি পাবে না। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০টি আসন সীমাবদ্ধ করে দেওয়া। তার ফলে ক্ষমতাসীন সেই দলের সঙ্গে যারা আছে, তাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে পরামর্শ করে দেশ চলবে এবং তাদের দল একা স্বেচ্ছাচারিতা করতে পারবে না। এটা ছিল আমাদের প্রপোজাল। এটার নাম ছিল ভারসাম্যের রাজনীতি। এটা কোনো কঠিন বিষয় না।’ মাহী বি. চৌধুরী বলেছিলেন, বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনা তাঁদের নেই।
যুক্তফ্রন্ট এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে এসেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে এবার তিনটি আসন পেয়েছে তারা। তবে ২০টি আসনে তারা কুলা প্রতীকেও প্রার্থী ঘোষণা করে। মহাজোট থেকে তিনটি আসন পাওয়ায় যুক্তফ্রন্টের ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা জায়গায় তাদের নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।
এ ব্যাপারে বিকল্পধারা প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষমতার ভারসাম্য একটি প্রক্রিয়া। এটাতে ধাপে ধাপে এগোতে হবে। এটা একটা লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে ধাপে ধাপে এগোনোর বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে।’ তিনি জানান, দেশের মানুষ ভারসাম্য দেখতে চায়। শুধু আসন না, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতার ভারসাম্য মূল বিষয়। সেটা সংখ্যা বা কাঠামো দিয়েও হতে পারে। এ ছাড়া জানান, তাঁদের ইশতেহারে এ বিষয়টি উল্লেখ থাকবে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে আসনের ব্যাপারে ভারসাম্যের বিষয় না থাকলেও তাদের ১১টি লক্ষ্যের প্রথমটিতে বলা হয়েছে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানের জন্য সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। এ বিষয়ে তাদের ইশতেহারেও ঘোষণা থাকবে বলে জানা গেছে। বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের জন্য ২০টি আসন ছেড়েছে।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারসাম্যের রাজনীতির বিষয় আমরা আনিনি। এটা বিকল্পধারা বলেছিল। আমরা চেয়েছিলাম, ৩০০ আসনেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হবে। সবাইকে বিজয়ী করে আনতে হবে। ঢাকা-৬ আসনের এই প্রার্থী বলেন, বিএনপি নিজেদের এই আসনটি ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে উদারতা দেখিয়েছে। এটা ঐক্যের সৌন্দর্য।’