এক ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে গিয়ে জাতি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে: ফখরুল
এক ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানকে টিকা সরবরাহের একচেটিয়া সুবিধা দিতে গিয়ে সরকার সমগ্র জাতিকে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। করোনার টিকা সংগ্রহে স্বেচ্ছাচারিতা ও নতুন অনিশ্চয়তার সংবাদ আবারও সমগ্র জাতিকে গভীর হতাশা ও দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত করেছে।
আজ শনিবার দুপুরে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকেই ভারতের বিকল্প সূত্র থেকেও টিকা কেনার পরিকল্পনা নিলে আজ এ নিদারুণ অনিশ্চয়তায় পড়তে হতো না। আমরা প্রথম থেকেই এ কথাই বলে আসছিলাম। অবিলম্বে অন্য সূত্র হতে পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহের দাবি জানান তিনি।’
বিএনপি মহাসচিবের ভাষ্য, করোনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ও সুপরিকল্পিত নীতি প্রণয়ন না করার কারণে বিভিন্ন সময় যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা ইতিমধ্যে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। চলমান ‘লকডাউনের নামে শাটডাউন’ অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের সর্বশেষ উদাহরণ। এবারকার লকডাউনে মানুষের দুরবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে। এর মূলে দুটি কারণ, একটি রাজনৈতিক, অন্যটি অর্থনৈতিক।
লকডাউনের নামে মূলত সরকার বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারী আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন ঘোষণা করেছে বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, লকডাউনের শুরুর দিন থেকেই সারা দেশে ব্যাপকভাবে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামাসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতা–কর্মীকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
এ ছাড়া সরকারের অপকর্ম, দুর্নীতি, অত্যাচার, নির্যাতন ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে কোনো না কোনোভাবে নিবর্তনমূলক আইনের আওতায় এনে কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, গত ১৭ মাসের এই দীর্ঘ সময়েও করোনা প্রতিরোধে ন্যূনতম ব্যবস্থাপনা কৌশল গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। প্রথমবার করোনার প্রকট অজানা থাকার কারণে সম্যক প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়। কিন্তু এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তো আর তা বলা যাবে না। বিগত এক বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগাম সমন্বিত বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা বা একটি কার্যকরী রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বিলম্বে এসেছে। সরকার আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের অনেক সময় পেয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। সরকার এ সময় শতবার্ষিকী উদ্যাপনসহ নানা জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানমালা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। করোনার মধ্যেই বিভিন্ন স্তরের নির্বাচন করা হলো। পর্যটনের ক্ষেত্রেও লোকজনকে সীমিত করা হলো না। এই অনির্বাচিত অবৈধ সরকার জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নেই ব্যস্ত ছিল বেশি।
স্বাস্থ্যসেবা খাতে গত এক বছরে সক্ষমতা বাড়েনি, বরং দুর্নীতি বেড়েছে এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সময় দুর্নীতির সর্ব সীমা অতিক্রম করেছে এ সরকার। ঢাকায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত করোনা ফিল্ড হাসপাতালটি কীভাবে উধাও হয়ে গেল, তা জনগণ জানতে চায়। মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটের একই ভবনে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চালুকৃত করোনা হাসপাতালটি অলস ও অব্যবহৃত রেখে একই ভবনে অন্য তলায় আড়ম্বরপূর্ণভাবে পুনরায় নতুন একটি করোনা হাসপাতাল চালু করার অর্থ কী, জনগণ জানতে চায়।
মির্জা ফখরুল মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতের চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির মহোৎসবের সঙ্গে সাম্প্রতিক এই দুর্নীতির কাহিনি সবাইকে হতবাক করেছে। যারা মনিটরিং করবে সেই শর্ষেই ভূত থাকলে দুর্নীতির কি কোনো পরিসীমা থাকে?
গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও প্রণোদনা প্যাকেজ ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এর জন্য প্রয়োজন দেশপ্রেম, আন্তরিকতা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা। তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে পুনরায় কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট শ্রমশক্তি ছয় কোটি আট লাখ। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে (শ্রম আইনের সুবিধা পান) কর্মরত জনশক্তি মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। সবচেয়ে বড় অংশ ৮৫ দশমিক এক শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। এই হয়েছে দেশের পাঁচ কোটি মানুষ দিনমজুরের মতো কাজ করেন। যাঁদের শ্রম আইন-২০০৬ প্রদত্ত নিয়োগপত্র, কর্মঘণ্টা, ঝুঁকি ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, বাড়িভাড়াসহ বেশির ভাগ অধিকারই নিশ্চিত নয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রত্যেককে রাষ্ট্রীয় বিশেষ তহবিল থেকে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ৩ মাসের জন্য ১৫ হাজার টাকা এককালীন নগদ অর্থ প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আলোকে প্রয়োজনে এ বরাদ্দ নবায়ন করতে হবে।