ইভিএম একটি ‘নিকৃষ্ট যন্ত্র’, এটা প্রতিষ্ঠিত: সুজন
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেছে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ‘নিকৃষ্ট যন্ত্র’, এটা প্রতিষ্ঠিত। সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, তার আগে নারায়ণগঞ্জ সিটিসহ বিভিন্ন নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে যে ইভিএম মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ সংগঠনের কর্মকর্তারা এ কথা বলেন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করতে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
ইভিএমে ধীরগতি এবং কম ভোট পড়ার চিত্র তুলে ধরেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে হওয়া ৬টি আসনে ৫১ শতাংশ ভোট পড়ে। অথচ বাকি ২৯৪টি আসনে পেপার ব্যালটে ৮১ শতাংশ ভোট পড়ে। এবার কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ৫৯ শতাংশ ভোট পড়লেও, ২০১২ সালে কুমিল্লায় বায়োমেট্রিক ইভিএমে ৭৫ শতাংশ ও ২০১৭ সালে ব্যালটে ৬৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ইভিএমে অনেকে ভোট না দিতে পেরে চলে গেছেন; অর্থাৎ ইভিএম মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যে যন্ত্র মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, সেই যন্ত্র ব্যবহারের যৌক্তিকতা কী?
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। কিন্তু ইভিএম এখানে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে। বলা হয়, ইভিএমে সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল আসার কথা, কিন্তু চারটি কেন্দ্রে চার ঘণ্টা পরে কেন ফলাফল এল? আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’
সুজনের সম্পাদক বলেন, ইভিএম একটা নিকৃষ্ট যন্ত্র, এটা প্রতিষ্ঠিত। কারণ, এখানে পুনর্গণনার সুযোগ নেই। ভোট নিয়ে ইসি যে তথ্য দেবে, সেটাই মেনে নিতে হবে। প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী ইসির কারিগরি কমিটির প্রধান ছিলেন, কিন্তু তিনি ইভিএমের সুপারিশে সই করেননি।
অনেক দেশেই ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে এসেছে বলেও জানান তিনি।
ইভিএমের পক্ষে নির্বাচন কমিশনাররা সাফাই গাওয়া শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা কাঙ্ক্ষিত নয়।
প্রথম পরীক্ষায় অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে ইসি
গত ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। এটি ছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশনের প্রথম নির্বাচন। এ নির্বাচনকে অনেকে ইসির প্রথম পরীক্ষা হিসেবে দেখেছেন। প্রথম পরীক্ষাতেই তারা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে জানিয়েছে সুজন।
সুজন সম্পাদক বলেন, কুমিল্লা সিটির নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। ইসি আইনকানুন, বিধিবিধান ও আচরণবিধির ৩১ ও ৩২ ধারা কঠোরভাবে প্রয়োগ করেনি। কিছু চুনোপুঁটির ক্ষেত্রে সক্ষমতা দেখালেও রাঘববোয়ালদের ক্ষেত্রে দেখাতে পারেনি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য বাহারউদ্দিন বাহারের নাম উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনাররা আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে কর্তব্য পালনের শপথ গ্রহণ করেন। কিন্তু এখানে সেটা করেছেন কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। যদিও সংসদ সদস্য এ আইনের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যমান আইন তো এখনো বহাল। তা ছাড়া বাহারউদ্দিনের বিষয়ে প্রথমে তাঁরা এক রকম কথা বলেছেন, পরে কতগুলো সাংঘর্ষিক ও অসংলগ্ন কথা বলে বস্তুত শপথ ভঙ্গ করেছেন।
সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের কয়েকটা দল ছাড়া সবাই ইভিএমের বিপক্ষে। তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং নির্বাচনে আনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ইভিএম ব্যবহারের যৌক্তিকতা নেই।
ইসির প্রথম পরীক্ষায় অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘যে চারটি কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোর যদি প্রিন্ট নেওয়া যেত, যেটা ভারতে রয়েছে। ওখানে কেউ অভিযোগ করলে ইভিএমের প্রতিটি ভোট প্রিন্ট আউট করে পুনর্গণনার সুযোগ রয়েছে। আমাদের ইভিএমে প্রিন্টআউট না থাকার কারণে পুনর্গণনার সুযোগ নেই। এটা বড় বিতর্ক।’
যাঁরা ইভিএমে ভোট দিতে না পেরে ফেরত যান, তাঁদের জন্য বিকল্প ভোটের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে বলে মনে করেন রোবায়েত ফেরদৌস।
বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরে সুজনের কেন্দ্রীয় সদস্য একরাম হোসেন বলেন, কুমিল্লার নির্বাচনে নাগরিকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো অনেক কারণ আছে। একটি হলো সমাজকর্মীদের জায়গায় ব্যবসায়ীরা অধিক হারে নির্বাচিত হচ্ছেন। অন্যদিকে মামলার আসামি, এমনকি খুনের মামলা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও নির্বাচিত হচ্ছেন বেশি করে।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হলফনামায় দেওয়া তথ্যগুলোর সঠিকতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সুজন।