আওয়ামী লীগের ৭০ সাংসদ ঝুঁকিতে
>• যৌথ সভায় শেখ হাসিনা
• নির্বাচনের কৌশল ও এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা।
• বিভিন্ন উপকমিটি গঠন।
ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি জোট এখনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেয়নি।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভার পর দলের নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনী এলাকা ও সাংসদদের অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে করা একাধিক জরিপ প্রতিবেদন তাঁর কাছে আছে। এসব প্রতিবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, অন্তত ৭০ জন সাংসদের অবস্থা ভালো নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনবিচ্ছিন্ন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। কাউকে মনোনয়ন থেকে বাদ দেওয়া হলেও যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাঁর পক্ষে কাজ করতে হবে। কেউ পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে বিরোধিতা করলে তাৎক্ষণিকভাবে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। অতীতে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শাস্তি দিয়ে ক্ষমা করা হয়েছে। এবার আর তা করা হবে না।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ, সংসদীয় দল এবং উপদেষ্টা পরিষদের এই যৌথ বৈঠকে দলের নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও সংসদীয় দলের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দেশটা যে সুন্দরভাবে চলছে, দেশের মানুষ স্বস্তিতে আছে, তাঁদের ভালো লাগছে না, তাঁরা চান একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। তাঁরা নির্বাচন চান কি চান না, সেটাই বড় প্রশ্ন।
বৈঠক সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামকে নিয়েও গতকাল আলোচনা হয়েছে। ধর্মভিত্তিক এই সংগঠন সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নেতারা যাতে সমালোচনা না করেন, সে বিষয়ে কথা হয়েছে। শরিক দলগুলো যাতে এটি মেনে চলে তা খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।
হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীকে এক করে দেখার সুযোগ নেই বলে বৈঠকে আলোচনা হয়।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) সমালোচনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ইভিএমে দ্রুত মানুষ ভোট দিতে পারে। তাতে আপত্তি কিসের? সেটা তিনি বুঝতে পারেন না। ইভিএম আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে কেউ কারও ভোট চুরি করতে পারবে না। তাহলে সেখানে কী করে তারা আপত্তি জানায়?
১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট?
সংবিধান অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবর থেকে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। আগামী ১ নভেম্বর পাঁচ নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করবেন।
ইসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে একটি খসড়া তফসিল তৈরি করা হয়েছে। তবে তাতে ভোট গ্রহণের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির আলোচনার পর ভোট গ্রহণের দিন চূড়ান্ত করা হবে।
ইসি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর নির্বাচনের তফসিল নিয়ে সভা করবে নির্বাচন কমিশন। ৪ বা ৫ নভেম্বর ওই সভা হতে পারে। এরপর রেওয়াজ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। ওই ভাষণেই সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সাধারণত তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ৪০-৪৫ দিন সময় রেখে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনো এক দিন ভোট গ্রহণ হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
তফসিলের পর উত্তাপ
নির্দলীয় সরকার গঠন, ইসি পুনর্গঠনসহ সাত দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা বলছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণার পর রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। দলটি এ মুহূর্তে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া সাত দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০-দলীয় জোটের মুখপাত্র নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ন্যূনতম নির্বাচনী পরিবেশ ছাড়া ভোটে জনগণের মতামত প্রাধান্য পাবে না। বিএনপি বহু নির্বাচন করেছে। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপি সব সময় প্রস্তুত।
বিএনপি সূত্র জানায়, প্রকাশ্যে না হলেও দলের ভেতরে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি আছে। নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হলে তফসিল ঘোষণার পরপরই নিজ দলের মনোনয়ন ও শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, সেনা মোতায়েনের দাবি সুশীল সমাজের অনেকে ইসির সংলাপে দিয়েছিলেন। বিরোধী দল এসব দাবি আদায়ে সরকারের ওপর কতটুকু চাপ তৈরি করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। আওয়ামী লীগ পুরোদমে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিরোধী পক্ষ সমান সুযোগ পাচ্ছে না। তফসিলের পর বিরোধী দল সমান সুযোগ পাবে কি না বা কতটুকু সুযোগ পাবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।