আইপি টিভির রেজিস্ট্রেশন খুব শিগগিরই শুরু হবে: তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বুধবার সচিবালয়ে
ছবি: পিআইডি

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন বা আইপি টিভির রেজিস্ট্রেশন খুব শিগগিরই শুরু হবে এবং তার আগে নির্দেশিকা তৈরি করা হবে। আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আইপি টিভির রেজিস্ট্রেশন প্রদান সংক্রান্ত পর্যালোচনায় আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

আইপি টিভিকে নিউ মিডিয়ার একটি মাধ্যম হিসেবে বর্ণনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই, নিউমিডিয়া আরও বিকশিত হোক। কিন্তু পাশাপাশি এটি যেন কোনোভাবেই ভিন্নভাবে ব্যবহৃত না হয়, যাতে আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সংরক্ষিত হয়। আমাদের নতুন প্রজন্ম এই মাধ্যমকে যেন জীবন গড়ার কাজে লাগাতে পারে। তারা যাতে জীবন গড়ার ক্ষেত্রে আরও প্রত্যয়ী হয়। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম, দেশাত্মবোধ, মূল্যবোধ, মমত্ববোধ যাতে আরও বিকশিত হয়, যন্ত্র ব্যবহারের সঙ্গে মানুষ যেন যন্ত্র হয়ে না যায়, মানবিকতা টিকে থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নিয়মনীতির ভিত্তিতে দেশের প্রয়োজনে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ার প্রয়োজনে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় দেশটাকে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে যেন এটি (আইপি টিভি) ব্যবহৃত হয়, সে লক্ষ্যেই আমরা এই কাজগুলো (রেজিস্ট্রেশন) করছি।’

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও তথ্য অধিদপ্তরের প্রধানদের নিয়ে ওই সভার আয়োজন করা হয়। এতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজান-উল-আলম ও খাদিজা বেগম, তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া, বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল মতিন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. আবদুস সাত্তার সরকার, বিটিআরসি পরিচালক লে. কর্নেল রেজা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রুজিনা বেগম, আইন কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান গাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আইপি টিভির পাশাপাশি আজকের বৈঠকে ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্ম নীতিমালা এবং নিউ মিডিয়ার অন্যান্য মাধ্যমগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ক্রমবিকাশমান বহুমুখী এই মাধ্যম নিয়ে আমরা নানা পর্যালোচনা করেছি। বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি খুব সহসা আইপি টিভির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে, তার আগে নির্দেশিকা তৈরি করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইপি টিভি রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রায় ৬০০র মতো আবেদন জমা পড়েছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে রেজিস্ট্রেশনের উদ্যোগ নিয়েছি এবং অনেকগুলোর বাছাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক (তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি) উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় আজকে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাটি আইসিটি উপদেষ্টা জাতির পিতার দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকেই এসেছে, যেটি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাস্তবায়িত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে বহুমুখী সম্প্রচার কার্যক্রম হচ্ছে। আগে সম্প্রচার শুধুমাত্র রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে হতো। এখন নিউ মিডিয়ার মাধ্যমে সম্প্রচার হচ্ছে।’

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণের যুগে এখন বিনোদন, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রত্যেকটির মাধ্যমগুলো পরিবর্তন হয়েছে। একসময় যা শুধু ইলেকট্রনিক বা প্রচলিত প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন নতুন নতুন মাধ্যম যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, আইপি টিভি ও রেডিও, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ভিডিও স্ট্রিমিং, ভিডিও অন ডিমান্ড— এ রকম অসংখ্য নতুন প্রযুক্তিনির্ভর সম্প্রচার মাধ্যম তৈরি হয়েছে।

সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রীর বৈঠক

এর আগে সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রীর দপ্তরে ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. আবদুল মজিদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মুরসালীন নোমানী, সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।

বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাংবাদিকেরা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব নিয়ে কেউ যেন পানি ঘোলা না করতে পারে এবং সরকারের সঙ্গে সাংবাদিকদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এতে কোনোভাবেই ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। আমি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে বিষয়টা দেখছি।’