আইজিপি কি অনুমতি নিয়ে বোট ক্লাবের দায়িত্বে, জানতে চান হারুন
আলোচিত বোট ক্লাব সরকারের অনুমোদন নিয়ে গড়ে উঠেছে কি না এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক সরকারের অনুমতি নিয়ে এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন কি না, তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ।
আজ শুক্রবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দেওয়া বক্তব্যে বোট ক্লাবসহ তিনটি বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন হারুন। অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য দেননি।
বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, দেশে মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় হাউস পার্টি, ডিজে পার্টির নামে মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে, তাঁরা আশা করেন এর বিরুদ্ধে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বোট ক্লাবের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। সংসদের গত অধিবেশনে তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, নদীর তীরবর্তী জায়গায় বোট ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে কি না। বোট ক্লাবে নিয়মিত মদ্যপান করা হয়, তাস খেলা হয়, জুয়া খেলা হয়। এ রকম একটি ক্লাবে পুলিশের প্রধান আইজিপি সভাপতি কোনো আইনে থাকতে পারেন কি না, এ বিষয়ে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিবৃতি দাবি করেছিলেন।
হারুন বলেন, ‘আমার জানা নাই, ৫০ বছরের ইতিহাসে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ ধরনের কোনো ক্লাবে পুলিশের প্রধান সভাপতির দায়িত্ব বা এই রকম ক্লাব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেছেন।’
আবারও এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে হারুন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেপরোয়া যেসব কর্মকাণ্ড, মাদক কারবারের সঙ্গে তারাও জড়িয়ে পড়েছে।
হারুন বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমনিকে গ্রেপ্তার ও জামিনের ঘটনাও বেশ নাড়া দিয়েছে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পরীমনি গণমাধ্যমে বলেছেন, কত নাটক করে তাঁকে ধরে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে বলা হয়েছিল, শুধু অফিসে নেওয়া হবে আর কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হারুন বলেন, পরীমনির ঘটনা তদন্তের তদারক কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়েছিল র্যাব। র্যাব নিজেরা এই ঘটনা তদন্ত করার দাবি জানিয়েছিল। কারণ, এর পেছনে অনেক বড় শক্তি জড়িত। এদের যারা ব্যবহার করছে, তাদের চিহ্নিত করা দরকার।
পরীমনিকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন বিএনপির এই সাংসদ। তিনি বলেন, পরীমনির ঘটনায় হাইকোর্ট পর্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, পরীমনি একজন নারী, অসুস্থ, চিত্রজগতের কর্মী—এ জন্য জামিন দেওয়া হয়েছে। এটা কোনো কথা হতে পারে? তাঁকে পরপর কেন তিন দিন রিমান্ডে নেওয়া হলো, এটি নিয়ে হাইকোর্ট জজকোর্টের নথি তলব করেছেন। এটা নিয়ে জনগণের মধ্যে ‘পারসেপশনটা’ ভিন্ন হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, র্যাব যে পরীমনিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছিল, গ্রেপ্তার করেছিল, তাঁর বাড়িতে যে মিনি বার, এগুলো কি অসত্য?
মোসারাত জাহানের (মুনিয়া) আত্মহত্যায় প্ররোচনায় মামলা তদন্তের জন্য নতুন করে র্যাবকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিবৃতি দাবি করেন হারুন। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে মুনিয়া নামে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছিল। আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলার পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে। বসুন্ধরার এমডির সঙ্গে মুনিয়ার ফোনালাপ, তার সঙ্গে ছবিও গণমাধ্যমে এসেছে। তিনি জানতে চান, এই ঘটনার তদন্তভার র্যাবকে দেওয়া হবে কি না। যদি না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি মনে করবেন এসব অপরাধে যারা জড়িত, সরকার তাদের চিহ্নিত করতে চায় না, আড়াল করতে চায়। এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া দরকার। অপরাধগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা দরকার।