আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের নেতারা মনে করেন, বিএনপি-জামায়াতকে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনোভাবেই আর ছাড় দেওয়া উচিত হবে না।
এই জোটের নেতারা বিএনপির চলমান আন্দোলনের পেছনে নানামুখী ষড়যন্ত্র দেখছেন। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি-জামায়াত যাতে কোথাও দাঁড়াতে না পারে, সেই শপথ নেওয়ার এখন সময় এসেছে বলে মনে করে ১৪ দলভুক্ত তরিকত ফেডারেশন।
দলটির মূল্যায়ন হচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির অনেক ‘ছাড়’ পেয়েছে। তারা আর ছাড় পেতে পারে না।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনের পাশে ১৪–দলীয় জোট আয়োজিত সভায় তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেছেন, বিএনপি আসুক বা না আসুক, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবেই। শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় যাবেন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতায় আসা দূরের কথা, তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, বিএনপি যে ১০ দফা দিয়েছে, এর মধ্য দিয়েই তাদের ‘মুখোশ’ উন্মোচিত হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ীই সরকার পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
মহান বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৪ দল আয়োজিত এই সভার গতকাল বেলা তিনটায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বেলা দুইটা থেকেই প্রতিটি দলের ব্যানারে নেতা-কর্মীরা পৃথক মিছিল নিয়ে সভাস্থলে আসতে থাকেন। একইভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিল, এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। এই ঐক্যে ফাটল ধরানোর সুযোগ নেই। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ আছে।
সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, গত নভেম্বরের শেষ দিকে বিএনপি নানাভাবে উসকানি দিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার একটা পাঁয়তারা করেছিল। স্থিতিশীল সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য এখনো নানাভাবে তারা ষড়যন্ত্র করছে।
বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কামরুল ইসলাম দাবি করেন, ১০ দফা দিয়ে বিএনপি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চায়। এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনে না এলে বিএনপির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দেশের সব প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তিনি বলেন, প্রগতিশীল যেসব শক্তি ভিন্ন পথে হাঁটছে, তাদের ফল ভালো হবে না।
সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসিত বরণ দাস, বাসদের রেজাউর রশীদ খান, গণ–আজাদী লীগের এস কে শিকদার প্রমুখ। সভার সঞ্চালক ছিলেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম।
সভায় বিএনপির উদ্দেশে জাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কেউ কেউ ক্ষমতায় আসার দিবাস্বপ্ন দেখছে। এই স্বপ্ন পূরণ হবে না। বিএনপির অসাংবিধানিক দাবি মেনে নেওয়া হবে না।