আঙুল দিয়ে চাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট হয়ে গেছে

সিলেটের হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন ৮৬ বছর বয়সী মালেহা বেগম। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে
ছবি তানভীর আহাম্মেদ

মালেহা বেগমের বয়স ৮৬ বছর। এবারই প্রথম তিনি ইভিএমে ভোট দিয়েছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন তিনি। আজ বুধবার সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া ভোটে তিনি বেলা পৌনে ১১টার দিকে ভাগনে মো. আমিনুল হক চৌধুরীর সঙ্গে ভোট দিয়ে বের হয়েছেন।

ক্রাচে ভর দিয়ে ভোট দিতে এসেছিলেন মালেহা বেগম। ভোট দেওয়া শেষে বের হয়ে বললেন, এবার মেশিনে চাপ দিয়ে আঙুল দিয়ে প্রথম ভোট দিয়েছেন। ভালো হয়েছে। সময় কম লেগেছে।

মালেহা বলছিলেন, ‘আঙুল দি চাপ দেওয়ার লগে লগে ভুট অইগেছে (আঙুল দিয়ে চাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট হয়ে গেছে)।

মালেহা বেগম মেয়ের সঙ্গেই থাকেন। তিন ছেলে থাকলেও তিনি মেয়ের ঘরেই থাকেন।
মালেহা বেগমের সঙ্গে থাকা কিশোর নাতি আবদুল হক বলে, নানিকে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য মা বলেছেন।

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আবু হানিফ বলেন, কেন্দ্রে পুরুষ ও নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছেন ২ হাজার ৯৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৫১১ এবং নারী ১ হাজার ৪৩১ জন। আটটি ভোটকক্ষে ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন। ভোটাররা ইভিএমে নতুন ভোট হওয়ায় ভোট একটু বিলম্ব হচ্ছে।

মো. আবু হানিফ আরও বলেন, ইভিএমে তেমন কোনো সমস্যা নেই। মাঝেমধ্যে আঙুলের ছাপ নিতে একটু সমস্যা করছে। তবে সেটি কিছু সময় পর ঠিক হয়ে যাচ্ছে।

নির্বাচনে এবার আটজন মেয়রপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাতপাখা প্রতীকের মাহমুদুল হাসান, জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকে মো. জহিরুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকে মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু, ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, বাস প্রতীকে মো. শাহজাহান মিয়া ও হরিণ প্রতীকে মোস্তাক আহমদ রউফ মোস্তফা।
এ ছাড়া ২৭৩ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৮৭ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়রপ্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী মাহমুদুলহাসান নির্বাচন বর্জন ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আফতাব হোসেন খান সশস্ত্র মহড়ার ঘটনায় নির্বাচন কমিশন তাঁর প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করেছে। এতে মূলত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলিয়ে ৩৬৬ জন প্রার্থী।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডসহ ৪২টি ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৪২টি ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৯০টি। ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৩৬৭টি। নির্বাচনে সব কটি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ থাকবে সিসি ক্যামেরার আওতাধীন।

এর মধ্যে নির্বাচনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১ জন করে মোট ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, প্রতিটি কেন্দ্রে ১৪ জন করে আনসার সদস্য, ৫ জন করে পুলিশ সদস্য থাকবেন। এর বাইরে পুলিশ ও র‍্যাবের আলাদা স্ট্রাইকিং ফোর্স নির্বাচনের দিন মোতায়েন থাকবে। ১০ প্লাটুন বিজিবি নির্বাচনের মোতায়েন থাকবে। তাদের সঙ্গে থাকবেন একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট যেকোনো অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচারকাজ সম্পন্নের জন্য মাঠে রয়েছে ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।