বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন দেখছে না বিএনপি

সংবাদ সম্মেলন করে ভোটার তালিকা নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে বিএনপি। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়, ৯ ডিসেম্বরছবি: বিএনপির সৌজন্যে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন দেখছে না বিএনপি। দলটি ভোটার তালিকার আপগ্রেড (হালনাগাদ) চায়। একই সঙ্গে বিএনপি মনে করে, দ্রুত নির্বাচন দেওয়া সম্ভব।
আজ সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ভোটার তালিকা নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে বিএনপি। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির উদ্যোগে গঠিত নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিটি।

সংবাদ সম্মেলন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, সত্যিকার অর্থে একটি সঠিক ভোটার তালিকা চান তাঁরা। কিন্তু এর জন্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়ি বাড়ি যাওয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ, অপ্রয়োজনীয় এবং তাতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটার তালিকা আপগ্রেডের কাজটি করা হলে তা অবশ্যই নির্ভুল হবে।

বিএনপি গঠিত নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক মঈন খান। তিনি বলেন, ভোটার তালিকার বিষয়ে বিএনপির সংস্কার প্রস্তাবে আপগ্রেড করার কথা বলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মঈন খান বিগত সরকারের আমলে আরপিওর (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন) যেসব ধারা সংশোধন করা হয়েছিল, তা বাতিল করা, নির্বাচনী পরিচালনার কিছু বিধিমালা সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধি ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নীতিমালা সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা উন্নত করা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের জন্য নির্বাচনী আচরণ বিধিমালাসহ ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছেও দিয়েছে বিএনপি।

মঈন খান বলেন, ‘মানুষ যাতে সত্যিকারভাবে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে এবং জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, ডামি প্রতিনিধি না হয়, ভুয়া প্রতিনিধি না হয়, সে জন্য আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাব।’

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ২ ডিসেম্বরের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০২৪ সালের জন্য হালনাগাদ করা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা আগামী ২ মার্চ প্রকাশ করা হবে। এরপর ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ওই হালনাগাদে যাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তাঁরা ২০২৬ সালের ২ মার্চের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় (হালনাগাদ) অন্তর্ভুক্ত হবেন। ইসি মনে করছে, চলতি বছর বড়সংখ্যক মানুষ ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হননি। যে কারণে আগামী বছরের হালনাগাদ কার্যক্রমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। প্রতিবছর ২ জানুয়ারি তার আগের বছরের তথ্য নিয়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করে ইসি। তালিকা নিয়ে দাবি, আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ২ মার্চ প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত তালিকা। আগামী ২ মার্চ চলতি বছরের (২০২৪ সাল) তথ্য নিয়ে হালনাগাদ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আইনে হালনাগাদের বাইরে ইসিকে যেকোনো সময় ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষমতাও দেওয়া আছে। কোনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়পর্ব ছাড়া অন্য যেকোনো সময় নির্ধারিত পদ্ধতিতে, প্রয়োজন অনুসারে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে পারে ইসি। এতে ভোটার হওয়ার যোগ্য কিন্তু বাদ পড়েছেন, এমন নাগরিকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা, মৃত বা ভোটার হওয়ার অযোগ্য ব্যক্তির নাম তালিকায় থাকলে সেগুলো বাদ দেওয়া, ভোটার এলাকা স্থানান্তর, তালিকার যেকোনো ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে সেগুলো দূর করার ক্ষমতা দেওয়া আছে।

দ্রুত নির্বাচন সম্ভব

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন–সংস্কারে বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি, তাতে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এখানে এমন কোনো প্রস্তাব করা হয়নি, যেটা নতুন করে কোনো কিছু করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি, নির্বাচন সচিবালয় করা এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেওয়া ইত্যাদি। প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন, সংস্কার…এগুলোর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না। একটা নির্বাচনের মূল কাজ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সেই ভোটার তালিকা প্রণয়নে বাড়ি বাড়ি যাওয়া…আমরা এটা বুঝি নাই কী এক্সসারসাইজ হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অপকর্ম হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারা বিতাড়িত হয়েছে, পলায়ন করেছে। যাদের মাধ্যমে অপকর্ম করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন তাঁরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছি, সেগুলো অধিকাংশ আইনি সংস্কারের বিষয়, প্র্যাকটিক্যালি যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয়, যেমন ভোটার তালিকা প্রণয়ন…নতুন ভোটার সংযোজন…কী কী ভুলভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার স্কুটনি করা, তারপরে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ, ডিলিমিটেশন ইত্যাদি—সব কাজ গোছাতে প্র্যাকটিক্যালি দুই-তিন মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ।