অতি দ্রুত যেন সংস্কারগুলো করা হয়: অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভার পর ব্রিফিং করেন। ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বরছবি: বিজ্ঞপ্তি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে যেসব সংস্কারের কথা বলেছেন এবং যাঁদের দায়িত্ব দিয়েছেন, এই সংস্কারগুলো যেন অতি দ্রুত হয়, সে বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যত দ্রুত সম্ভব তাদের কাজগুলো শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগামী ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বরের কর্মসূচি নিয়ে অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যৌথ সভার পর ব্রিফিংয়ে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা একটা বক্তৃতা দিয়েছেন জাতির উদ্দেশে। তিনি কতগুলো বিষয়ে সংস্কারের কথা বলেছেন। সংস্কারের দায়িত্ব যাঁদের দিয়েছেন, তাঁদের নাম বলেছেন। তিনি মোটাদাগে তাঁর সরকারের ভিশন তুলে ধরেছেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সবাই সংস্কারের কথা বলছি এবং সংস্কার যে প্রয়োজন, সেটা বলেছি। সে ক্ষেত্রে অতি দ্রুত যেন এই সংস্কারগুলো করা হয়। মূল যে বিষয়টা, গণতন্ত্রের জন্য জনগণের প্রতিনিধিদের যে শাসন, জনগণের নির্বাচিত সংসদ দিয়ে দেশ পরিচালনা, সে বিষয় যেন দ্রুততার সঙ্গে হয়, সেটি আমাদের প্রত্যাশা থাকবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কাজ করছে। তাদের সময় ও সুযোগ দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আশা করি, তারা যথাশিগগির তাদের কাজগুলো শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা কামনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কারণ, এই সরকার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসেছে। তবে এখানে একটি কথা খুব স্পষ্টভাবে বলা দরকার, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা, যা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন গড়তে পারে। সে জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তৈরি করা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু সেই কাজটায় জনগণের অংশীদারত্ব থাকতে হবে। জনগণ কী চায়, সে বিষয়টা থাকতে হবে। আশা করি, সরকার উপলব্ধি করবে এবং যাঁদের সংস্কারের দায়িত্বে দেওয়া আছে, তাঁরা অত্যন্ত সুচারুরূপে পালন করবেন।’

জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরে না আসা–সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে এ ধরনের কিছু সমস্যা থাকতেই পারে। কারণ, এ সরকার তো একটি সম্পূর্ণ নতুন সরকার। প্রশাসনে আওয়ামী লীগ যেটা করেছে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিকীকরণ করতে গিয়ে সব লোক তাদেরই নিয়োগ দিয়েছে, পদায়ন করেছে, তাদেরই পদোন্নতি দিয়েছে। ফলে এটা একটু সময় লাগবে। সুতরাং নতুন করে অফিসার নিয়োগ দিয়ে তো কাজ করা সম্ভব নয়। ফলে যা আছে, তা নিয়ে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।’

শিল্পকারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য পরিকল্পিতভাবে চক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার জন্য একটা চক্র কাজ করছে। পতিত ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা ভারতে বসে সেখান থেকে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বাংলাদেশ সম্পর্কে, দেশের মানুষের সম্পর্কে। এই অপপ্রচারগুলো কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এটাকে অবশ্যই প্রতিবাদ করছে এবং এ ধরনের অপপ্রচারে তারা কান দেবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। একই সঙ্গে শিল্পক্ষেত্রে একটা অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশপ্রেমিক মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে এ ধরনের প্রবণতাকে নস্যাৎ করে দেবেন; যেন কোনো ব্যক্তি কোনাভাবেই বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যকে বিনষ্ট করতে না পারে।’

ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল ১৪ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ এবং ১৫ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, শহীদ মিনারে সমাবেশে গত ১৪ থেকে ১৫ বছরে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, পঙ্গু অথবা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের আত্মীয়স্বজনের নিয়ে এই সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশে সংগীত, কবিতাপাঠ, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হবে। পরদিন ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক ‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে সমাবেশ হবে।

এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, হাবীব উন নবী খান ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালামসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁদের উপস্থিতিতে সংবাদ ব্রিফিং হয়।