ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগ ফিরে আসতে চাইছে উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, এখন ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য প্রয়োজন। এর অংশ হিসেবে ১৯টি ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সোমবার রাতে জরুরি আলোচনা সভা করেছে তারা। এই সভায় চারটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এর একটি হচ্ছে ‘জিরো টলারেন্স টু আওয়ামী লীগ’ (আওয়ামী লীগের প্রতি শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি দেখানো)। আরেকটি হচ্ছে মঙ্গলবার থেকে এক সপ্তাহ ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি’ পালন।
‘চলমান দ্বন্দ্ব ও সংঘাত’ নিরসনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত এই সভায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদসহ ১৯টি ছাত্রসংগঠনের নেতারা অংশ নেন। সোমবার রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সভা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ, মুখপাত্র উমামা ফাতেমাসহ নির্বাহী কমিটির সদস্যরা সভায় অংশ নেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান খান ও সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতা আবদুল ওয়াহেদ প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
সভায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব তুলে ধরেন। ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ তাঁদের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়া নিয়েও আক্ষেপ করেন বলে সভা সূত্রে জানা গেছে।
সভা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিছু মৌলিক বিষয়ে সবাই একমত থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘জিরো টলারেন্স টু আওয়ামী লীগ’। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের প্রশ্নে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি ছাত্রসংগঠন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করবে। কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করা যাবে না৷
১. মঙ্গলবার থেকে এক সপ্তাহ ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি’ পালন করা হবে। এর আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একতা ও সংহতির বার্তা পৌঁছানো হবে।
২. গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে যাঁরা আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি।
দেশে আন্দোলনের মৌসুম চলছে উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এখানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের ব্যাপক অর্থায়ন রয়েছে। নীতিগতভাবে সবাই একমত হয়েছে, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে যাঁরা আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সুস্পষ্ট ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে৷
ঐকমত্যের তৃতীয় বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে প্রশাসন ফ্যাসিবাদকে হৃষ্টপুষ্ট করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি ভেবে থাকে এই একই আওয়ামী প্রশাসন দিয়ে পরিশুদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করা যাবে, সেটা হবে সরকারের একটা ভুল পদক্ষেপ। অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুততম সময়ে প্রশাসন থেকে আওয়ামী রাজনৈতিক সুপারিশে নিযুক্তদের বাদ দিয়ে প্রশাসনিক কাঠামো পরিশুদ্ধ করতে হবে।
ঐকমত্যের চতুর্থ বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন আন্দোলনের উপলক্ষ পেয়ে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের দোসররা যুক্ত হচ্ছ, কলহ তৈরি করছে। সেই জায়গা থেকে ৫ আগস্টের আগের মতো ঐক্যের বার্তা নিয়ে আগামী এক সপ্তাহ ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ ঘোষণা করছেন তাঁরা। এর অংশ হিসেবে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একতা ও সংহতির বার্তা পৌঁছে দেবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার যে কোনো বিকল্প নেই, সেই বার্তাটি পৌঁছে দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক মেলবন্ধন সুদৃঢ় করতে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
ঐক্যের আলোচনা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, ছাত্ররাজনীতির কাঠামো কী হবে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনে তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্রসংগঠনগুলোর কীভাবে অবদান রাখতে পারবে, তা নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য ছাত্র কাউন্সিল গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।
শেষে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বিভিন্নভাবে বিভাজনের চেষ্টা হবে, নোংরা রাজনীতি করার চেষ্টা হবে। সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এর পেছনে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, জাতীয় সম্পদ ও জাতীয় ঐক্য যাতে নষ্ট না হয়, ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো যাতে পুনর্বাসনের সুযোগ না পায়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘একটা ধারণা তৈরি করা হয়েছে, আওয়ামী লীগই সংখ্যালঘুদের রক্ষা করে। কিন্তু দেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগই সংখ্যালঘুদের অধিকার সবচেয়ে বেশি হরণ করেছে, সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, বিদেশে বসেও তারা (আওয়ামী লীগ) ষড়যন্ত্র করছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
এই আলোচনা সভার আগে সোমবার বিকেলে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা হয়। সেখানেও ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের পাশাপাশি সব অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।