আমরা এখনই নির্বাচন চাই না: জি এম কাদের
অনির্বাচিত সরকারগুলোই জনগণের মতামতের বেশি গুরুত্ব দেয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। অতীতে নির্বাচিত সরকারগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অতীতে ভালো নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার বেশির ভাগ সময়ে স্বৈরশাসক হয়েছিল। কিন্তু অনির্বাচিত সরকারগুলোই অনেক বেশি গণতন্ত্রমনা ছিল। তাই বর্তমান অনির্বাচিত সরকারকে সংস্কারের জন্য সময় দিতে আমাদের আপত্তি নেই।’
আজ সোমবার দুপুরে দলের বনানীর কার্যালয়ে জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টি ভবিষ্যতে ভালো নির্বাচনের পর ভালো সরকার দেখতে চায় উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা এখনই নির্বাচন চাই না। কারণ, ভালো নির্বাচন আমরা অতীতে অনেক দেখেছি। ভালো নির্বাচনের পরে ভালো সরকার হয় না। ভালো নির্বাচনের পরে আমরা ভালো সরকার দেখতে চাই, যাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে, যারা ব্যক্তিগত ও দলীয় সম্পদ হিসেবে দেশকে ব্যবহার করবে না। সেই রকম সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। সে জন্য বর্তমান সরকারকে আমরা সময় দিতে রাজি আছি।’
তবে জি এম কাদের এ-ও বলেন, তাঁরা চান বর্তমান সরকার যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পারে, দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, কর্মসংস্থান যেন থাকে, তাহলে তাদের অপেক্ষা করতে আপত্তি নেই।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল। শোষণ ও নির্যাতনের জন্যই তাদের পতন হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পতন হয়নি। সরকারের পতন হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে।
ছাত্র আন্দোলনের নিজের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা সব সময় বৈষম্য ও দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। সংসদে আমি শেখ হাসিনার সামনেও আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই আমরা ছাত্রদের ন্যায্য দাবির পক্ষে ছিলাম। কোটাপদ্ধতির বিপক্ষে আমরা সংসদে কথা বলেছি। সংসদের বাইরেও বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলেছি, চাকরিতে কোটাপদ্ধতি হচ্ছে সংবিধান পরিপন্থী।’
বিগত আন্দোলনে দেশের ছাত্রসমাজের অবদান ও ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল, ছাত্ররা রাজনীতিতে আসতে চায় না। কেউই বুঝতে পারেনি ছাত্ররা এতটাই রাজনীতিসচেতন। প্রমাণ করেছে, ছাত্ররা আমাদের চেয়ে বেশি রাজনীতি বোঝে।’ তিনি বলেন, ছাত্রদের প্রধান শক্তি হচ্ছে একতা। দ্বিতীয় শক্তি হচ্ছে জনগণের আস্থা। ছাত্রদের প্রতি জনগণের আস্থা ছিল, তাঁরা দেশের জন্যই আন্দোলন করেছে। সে জন্যই ছাত্রদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে এবং ক্ষমতা ও লোভ–লালসার বাইরে থাকতে হবে।
রাজনীতির অনেক জটিল হিসাব-নিকাশের কথা উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, কিন্তু তাদের একটি সমর্থক গোষ্ঠী আছে। আগামী নির্বাচনে তাদের একটা ভূমিকা থাকবে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে বিএনপি ক্ষমতায় না এসেই তাদের নেতা-কর্মীরা যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে, তা সাধারণ মানুষ পছন্দ করছে না। রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির মুখোমুখি অবস্থা। কেউ দখলবাজি শুরু করলে ছাত্ররা তার প্রতিবাদ করছে। শেষ পর্যন্ত জনগণ কার পক্ষে থাকবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।’
বর্তমানে দেশে বিশৃঙ্খলা আছে মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, এটা চলতে থাকলে জনগণ এই সরকারের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠবে। আবেগ ও জীবন দিয়ে দেশ রক্ষা করা যায়, কিন্তু দেশ চালানো যায় না। দেশ চালাতে জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দরকার হবে। এককভাবে ছাত্ররা দেশ রক্ষা করতে পেরেছে, কিন্তু এককভাবে ছাত্ররা দেশ চালাতে পারবে না। তিনি দলের ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজকে আরও সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেন।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম, শেরীফা কাদের, মাসরুর মওলা, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, আরিফুর ইসলাম খান প্রমুখ।