সজাগ দৃষ্টি রাখবেন, আপনার সম্মানের জায়গাটা যাতে নষ্ট না হয়: ড. ইউনূসের প্রতি মির্জা ফখরুল
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করার লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটি দ্রুতই কমিশন গঠন করবে এবং সেই কমিশন দ্রুততার সঙ্গেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিন মাসে যদি হাবিবুর রহমান সাহেবরা নির্বাচন করে ফেলতে পারেন, তাহলে কেন পারা যাবে না। চাইলেই পারা যাবে, সে চেষ্টা করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের অন্য কোনো রকম রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই।’
এই বিশ্বাসের ভিত্তি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কারণ (অন্তর্বর্তী সরকারের) এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন (ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস) এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সারা পৃথিবীতে সমাদৃত এবং তিনি কমিট (অঙ্গীকার) করেছেন যে তাঁর কোনো রকমের রাজনৈতিক ইচ্ছা নেই।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশের মানুষ আপনাকে খুবই ভালোবাসে। আপনাকে সম্মান দিয়েছে, দেবে এবং দিতে চায়। একটাই অনুরোধ থাকবে, আপনার এই জায়গা যাতে নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা একটা জটিল সময় পার করছি। যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। চক্রান্ত শেষ হয়নি। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যাসিস্টরা এখনো সক্রিয়। শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন করে পুরো কাঠামোর পরিবর্তন করা যায় না। সেটার জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়।’
সরকার সময়ের সদ্ব্যবহার করবে বলে আশা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য বিষয়ের দিকে না গিয়ে নজরটা ওই দিকে দেবেন, ইলেকশন (নির্বাচন)—এটার কোনো বিকল্প নেই। আমাকে রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে, জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে এখানে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সবার অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন করতে হবে। সেই কারণেই কিন্তু এতগুলো প্রাণ গেছে, এত মানুষ দীর্ঘকাল ধরে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, কারাগারে গেছে।’
এ প্রসঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরে ১ লাখ ২৫ হাজার মামলায় সারা দেশের ৬০ লাখ মানুষকে আসামি করার কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এখানে এমন লোক খুব আছে, যারা কারাগারে যায়নি, এমন লোক কম আছে, যারা মামলা খায়নি। ফাঁসি থেকে শুরু করে হত্যা, গুম, খুন—সবকিছু এই দেশে আওয়ামী লীগ করেছে। সেখানে রাতারাতি আমরা সব পরিবর্তন করে ফেলতে পারব না...একটা সময় দিতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে,...টলারেন্স। আমরা আশা করব, অতি দ্রুত এবং তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) অবশ্যই চেষ্টা করছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তারা যে কিছু করেনি, সেটা তো নয়। ইতিমধ্যে তারা অনেকগুলো কাজ করেছে। সর্বশেষ যেটা করেছে, নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য একটা সার্চ কমিটি করেছে। যদিও আমাদের প্রত্যাশা ছিল, এই সার্চ কমিটি গঠন করার আগে রাজনৈতিক দলগুলো, অংশীজনদের সঙ্গে একটু পরামর্শ করবে। যা–ই হোক, সেটাকে আমরা বড় ধরনের সমস্যা মনে করছি না। দ্রুত নির্বাচন কমিশন হোক এবং নির্বাচন কমিশন দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি, এটা খুব অল্প সময়। এখনো তিন মাস হয়নি। ১৫-১৬ বছরের জঞ্জাল, গণতন্ত্রকে তিলে তিলে হত্যা করা, অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।’
পাকিস্তান আমল থেকে এ দেশে গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে একটা সংস্কৃতি। এটা জোর চাপিয়ে দেওয়া যায় না, এটা চর্চা করতে হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেই দল সবচেয়ে বেশি গণতন্ত্রের কথা বলত—আওয়ামী লীগ—তারাই ১৯৭২ সালে গণতন্ত্রকে গলাটিপে ধরেছে। তারপর যখনই সুযোগ পেয়েছে, তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। সেই দেশে এত সহজে এত অল্প সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে বলে মনে করেন না মির্জা ফখরুল। তিনি নেতা-কর্মীদের অস্থির না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন। আমি লক্ষ করেছি, অস্থিরতা। এত অস্থির হয়ে তো লাভ নেই। মুহূর্তের মধ্যে সব মানুষকে ভালো করে দিয়ে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) এখানে এত সুন্দর একটা নির্বাচন দেবে যে আপনারা সবাই খুশি হবেন। আমাদের সময় দিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার আমরাই তৈরি করেছি। অন্য কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা যাঁরা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম, ছাত্রনেতারা সবাই মিলেই এই সরকার গঠন করেছি। আমরা আশা করছি, সরকার একটা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেননি অতীতে। সেই ভোট দিয়ে তাঁরা নতুন সংসদ তৈরি করবেন। এটা আমাদের প্রত্যাশা এবং এটাই জনগণ চান।’
এনপিপির সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।