পর্দার আড়ালে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি জনগণ মানবে না: বাম গণতান্ত্রিক জোট

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাসদের অস্থায়ী কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার বৈঠক করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতারাছবি: সংগৃহীত

নয়াদিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কী ধরনের বোঝাপড়া, সম্মতি বা চুক্তি করেছেন, সেগুলো প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের নেতারা বলেন, দেশের সংবিধান অনুসারে অন্য দেশের সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক করতে হলে তা দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করা জরুরি; কিন্তু দেখা যাচ্ছে জনগণকে আড়ালে রেখেই এ ধরনের চুক্তিগুলো করা হয়। জাতিকে অন্ধকারে রেখে পর্দার আড়ালে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি জনগণ মানবে না।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক সভায় জোটের নেতারা এসব কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাসদের অস্থায়ী কার্যালয়ে এই সভা হয়।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার, বাসদের (মার্ক্সবাদী) নেতা জয়দ্বীপ ভট্টচার্য, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির আবদুল আলী প্রমুখ।

সভায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেন, জানা গেছে ভারতকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল করিডর দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। অথচ নেপালে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের ভেতর দিয়ে ১৮ কিলোমিটার করিডর ভারত আমাদের দেয়নি। ভারতকে একতরফাভাবে এত বড় করিডর দেওয়া হলো যে সেটি চালু হলে ভারতের এক অংশ থেকে অপর অংশে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পূর্বের রেল যাতায়তের তুলনায় দূরত্ব অনেক কমবে। এতে রেল ব্যবস্থাপনা, মালামাল পরিবহনসহ বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের ওপর ভারত তার প্রভাব আরও বাড়াবে। এমনকি অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন করল কি না, তা বাংলাদেশের জানার অধিকার থাকবে কি না, তা–ও নিশ্চিত নয়। ফলে তাদের পণ্যের ও যাত্রীর নিরাপত্তার কথা বলে ভারত সামরিক বাহিনী নিয়োগ করলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।

বাম জোটের নেতারা বলছেন, ‘অনেকে যুক্তি দেন, ইউরোপের অনেক দেশের মধ্যে এ ধরনের ট্রানজিট ও করিডর ব্যবস্থা আছে। আমরা বলতে চাই, ইউরোপের পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষার বিষয়ের সাথে বাংলাদেশে ভারতের একপক্ষীয় চুক্তিগুলো মোটেও তুলনা করা যায় না। এই অঞ্চলে ভারতের যে ধরনের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা রয়েছে, তাতে রেল করিডর চুক্তি একতরফাভাবে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা ছাড়া বাংলাদেশের জন্য যে লাভজনক কিছু হবে না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, অ্যান্টিডাম্পিংয়ের নামে অশুল্ক বাধা দূর, বাণিজ্যঘাটতি দূর করা ইত্যাদি; কিন্তু এসব নিয়ে কোনো আলোচনাই পরিলক্ষিত হয়নি বলে মনে করেন বাম জোটের নেতারা। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ অংশে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা পানিব্যবস্থাপনা প্রকল্পের জন্য ভারত টেকনিক্যাল টিম তৈরি করে বাস্তবে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিকে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তা ছাড়া তিস্তা প্রকল্পের জন্য ভারতের টেকনিক্যাল টিম পাঠানো বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক। এককথায় দেশের স্বার্থরক্ষা করে এমন কোনো শর্তই শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের সভা থেকে অবিলম্বে ভারতকে রেল করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল ও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে পানিবণ্টন চুক্তি সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়।