২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বিএনপির সমর্থকদের ভোট দিতে না করেছে আ.লীগ

সংসদের ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে আজ সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে।

ইভিএম পরীক্ষা করে দেখছেন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের একটি কেন্দ্রেছবি: তানভীর আহাম্মেদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ–২ ও ৩ আসনে উপনির্বাচনে বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার অনুরোধ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার হয়ে ভোটকেন্দ্র সমন্বয় করার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। সেখানে উকিল সাত্তারকে জেতাতে আওয়ামী লীগ কার্যত একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বগুড়া–৬ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীই ’ভোট ডাকাতি’ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নানা শঙ্কা ও অভিযোগের মুখেই সংসদের ছয়টি আসনে আজ বুধবার ভোট হতে যাচ্ছে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আসনগুলো শূন্য হয়েছে বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্যের পদত্যাগের কারণে।

‘বিএনপির সমর্থকেরা যেন ভোটকেন্দ্রে না যান’

যদিও বিএনপি এই উপনির্বাচনে অংশ নেয়নি। কিন্তু এরপরও বিএনপির সমর্থকেরা ভোট দিলে সেই ভোট আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে যাবে—এমন আশঙ্কা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি আসনের আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার ‘অনুরোধ’ করছেন। বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকেরা সবাই ভোট দিতে গেলে নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। বিএনপি-জামায়াত যেহেতু এই নির্বাচন বর্জন করেছে, তাই তাঁদের ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল হক ওরফে লিটন অভিযোগ করেছেন, শুধু ‘অনুরোধ’ করেই চুপ থাকবে না আওয়ামী লীগ। বরং বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য তৎপরতা চালাতে পারে।

অভিযোগের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা (বিএনপি-জামায়াত) ভোট দিতে গেলে নৌকার বিপরীতেই বেশি দেবে, এতে নৌকার ক্ষতি হবে। তবে ভোটকেন্দ্রে যেতে আমরা তাঁদের বাধা দেব না। কিন্তু আমরা তাঁদের অনুরোধ করছি, ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য।’

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা জানিয়েছেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে তাঁরা এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। তাঁদের কোনো সমস্যা হয়নি।

উকিল সাত্তারের নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগের হাতে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার হয়ে ভোটকেন্দ্রে সমন্বয় করার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। উকিল সাত্তারের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের অভিযোগ, তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ভয়ে কেউ এজেন্ট হতে চাইছে না। উকিল সাত্তারকে জেতাতে আওয়ামী লীগ কার্যত একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই নির্বাচনে ভোটকক্ষের ‘ডাকাত’ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন মাঠে টিকে থাকা প্রার্থীরা ও ভোটারদের অনেকে।

এই আসনের ৮২৬টি ভোটকক্ষের কোনোটিতেই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) থাকছে না। অন্যদিকে উপনির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে জেতাতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। ফলে ভোটারদের অনেকে নিজের ভোট নিজে দিতে পারা নিয়ে সন্দেহ করছেন৷

শুরু থেকেই উকিল সাত্তারের নির্বাচনী প্রচারে সরব ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও স্বজনদের ভোটকেন্দ্রে উকিল সাত্তারের নির্বাচনী এজেন্ট করা হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যাঁরা পদে আছেন, তাঁদের সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে৷ ফলে ভোটকক্ষেও আওয়ামী লীগের লোকজন উপস্থিত থাকবেন।

প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য ছয় সদস্যের সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা রয়েছেন এসব কমিটিতে।

শেষ পর্যন্ত প্রার্থী আছেন চারজন। তাঁরা হলেন উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া (কলার ছড়া), আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ (মোটরগাড়ি), জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী (লাঙ্গল) ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম (গোলাপ ফুল)।

আবদুস সাত্তারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ গত শুক্রবার থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৯ জন। মোট ১৩২টি কেন্দ্র ও ৮২৬টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে। সব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম পদ্ধতিতে।

সাত্তার বাদে বাকি তিন প্রার্থীর সমর্থকদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কর্মী-সমর্থক ও এজেন্টদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ভয়ে কেউ এজেন্ট হতে চাইছেন না। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে তাঁরা এজেন্ট দিতে পারবেন কি না, তারা এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।

বগুড়ায় মান্নানের শঙ্কা

ভোট নিয়ে শঙ্কায় আছে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ। দলটির এই বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্র দখল ও ‘ভোট ডাকাতি’ করে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার ‘নীলনকশা’র অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। কোনো কেন্দ্রে বহিরাগতদের ভাড়া করে নিয়ে এসে অন্য কারও ভোট দেওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে ভোটে আগ্রহ নেই ভোটারদের। তবে জমজমাট প্রচারণা চালিয়েছেন আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম।

ঠাকুরগাঁওয়ে শঙ্কা নেই

ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলার আংশিক) আসনের উপনির্বাচনে সাবেক দুই সংসদ সদস্য মো. ইয়াসিন আলী ও হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায়, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মো. সিরাজুল ইসলাম, জাকের পার্টির এমদাদুল হক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাফি আল আসাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই প্রার্থীরা কোনো শঙ্কা প্রকাশ করেননি।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক সামছুর রহমান, শাহাদৎ হোসেন ও বদর উদ্দিন এবং নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও।