গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হকের মধ্যকার দ্বন্দ্বে দলটিতে পাল্টাপাল্টি অব্যাহতির ঘটনা ঘটেছে। নুরুল হক ও তাঁর সমমনারা রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে মো. রাশেদ খানকে দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ঘোষণা করেছেন। এর পাল্টায় নুরুল হক ও রাশেদকে দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছেন রেজা কিবরিয়া। একই সঙ্গে যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে দলের নতুন সদস্যসচিব ঘোষণা করেছেন তিনি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন করে জনপ্রিয়তা পাওয়া নুরুল হক ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে নুরুল ও তাঁর সমমনারা ২০২১ সালের অক্টোবরে গণ অধিকার পরিষদ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। দলে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় গণফোরাম ছেড়ে আসা রেজা কিবরিয়াকে।
দল পরিচালনা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে নুরুল হকের বিরোধ চলছিল। একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিবৃতি দেন তাঁরা। নিজ নিজ ফেসবুক পাতায়ও পোস্ট দিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন দুজন।
দুই নেতার বিরোধে দলে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় গত রোববার ঢাকায় রেজা কিবরিয়ার বাসভবনে গণ অধিকার পরিষদের নেতারা বৈঠকে বসেন। দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ওই বৈঠকেও পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে রেজা কিবরিয়া দলের সদস্যসচিব নুরুল হকের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেশী দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগ করেন। এ ছাড়া রেজা কিবরিয়া দলের তহবিল নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলেন।
অন্যদিকে নুরুল হক পাল্টা অভিযোগ করেন যে তাঁদের দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া অনেক দিন ধরে ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের নেতৃত্বাধীন ইনসাফ কায়েম কমিটির কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। সে জন্য তিনি অর্থ পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন নুরুল হক। এ ছাড়া দলের কর্মকাণ্ডে সময় না দেওয়ার অভিযোগও করা হয় রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে।
ওই বৈঠকের পরদিন সোমবার রেজা কিবরিয়া বিদেশে চলে যান। এদিকে সোমবার রাতে নুরুল হকের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার গণ অধিকার পরিষদের প্যাডে রেজা কিবরিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নুরুল হককে গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ও রাশেদ খানকে যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতির ঘোষণা দেওয়া হয়।
রেজা কিবরিয়ার এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে নুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি (রেজা কিবরিয়া) দেশের বাইরে থেকে অব্যাহতি বা এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন না। এটা মনগড়া পদক্ষেপ। গণ অধিকার পরিষদে তাঁর কোনো ভিত্তি নেই। গণ অধিকার পরিষদ তরুণদের দ্বারা গঠিত সংগঠন। গণ অধিকার পরিষদ তৈরি হওয়ার আগেই বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন—ছাত্র, যুব, শ্রমিক, প্রবাসী ও পেশাজীবী সংগঠন তৈরি হয়েছে। তাতে রেজা কিবরিয়ার বিন্দুমাত্র অবদান নেই। সুতরাং সেই গণ অধিকার পরিষদের সংগঠকদের কীভাবে তিনি বহিষ্কার করেন?’
রেজা কিবরিয়ার মনোনীত সদস্যসচিব হাসান আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেজা কিবরিয়া ভাই আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়ার ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, আমি মনে করি, সংগঠনের সবাই মিলে বসে সেটির সমাধান করা উচিত।’