শর্তহীন সংলাপের আহ্বান-সম্পর্কিত যুক্তরাষ্ট্রের চিঠির জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাতে দলটি বলেছে, বর্তমান বাস্তবতায় অর্থবহ সংলাপের সময় ও পরিবেশ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সংলাপের আহ্বান জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে চিঠি দিয়েছিলেন ১৩ নভেম্বর। এর জবাবে ডোনাল্ড লুকে চিঠি লিখেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
চিঠিতে ওবায়দুল কাদের লিখেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত। তাই এই মুহূর্তে সংলাপ করার মতো সময় নেই। এ ছাড়া বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে অবরোধ পালন করছে। ফলে তাদের সঙ্গে সংলাপ করার পরিবেশ নেই।
ডোনাল্ড লুকে লেখা ওবায়দুল কাদেরের এই চিঠি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত আজ শুক্রবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে পৌঁছে দেন। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকটিং ডেপুটি চিফ অব মিশন আর্টুরো হাইন্স চিঠিটি গ্রহণ করেন। মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকেও চিঠি দিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ তাদের চিঠিতে বলেছে, বর্তমানে বিএনপি ও তাদের সমমনা মিত্র জামায়াতে ইসলামী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে টানা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এই অবরোধ সফল করতে তারা অগ্নিসংযোগসহ নানা কর্মকাণ্ড করছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্যমতে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫৪টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছেন অবরোধ সমর্থকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রকে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, যদিও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে আওয়ামী লীগ ইতিবাচক। তবে যে দাবিতে অবরোধ চলছে, এই পরিস্থিতিতে কোনো অর্থবহ সংলাপের পরিবেশ নেই। এ ছাড়া সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি, প্রচার কৌশল নির্ধারণ, ভোটারের কাছে ভোট চাওয়া—এসব কাজে পুরো সময় ব্যয় করতে হবে। সংলাপের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকলেও সময় স্বল্পতার জন্য ফলপ্রসূ সংলাপ সম্ভব ছিল না।
চিঠিতে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিলের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য শর্তবিহীন সংলাপের দরজা খোলা রেখেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপি তা অনুধাবন করেনি। তারা সংলাপের পূর্বশর্ত হিসেবে শেখ হাসিনা ও সরকারের পদত্যাগের বিষয়ে অনড় থাকে। এখন সংলাপ করার মতো যথেষ্ট সময় হাতে নেই।
চিঠির শেষে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সব আন্তর্জাতিক বন্ধুর সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশের মানুষকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে বন্ধুদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে আওয়ামী লীগ।
চিঠিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বন্ধু ও সহযোগীদের সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য প্রশংসা করেছে আওয়ামী লীগ। দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আগামী নির্বাচন সর্বাত্মকভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির পুনর্ব্যক্ত করা হয় চিঠিতে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক চিঠিতে বলেন, তাঁর দল ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ধারাবাহিকভাবে সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে প্রকৃত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কাঠামোগত, অর্থনৈতিক, জনবল ও আইনি নানা সংস্কার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রবর্তন করেছে।