যে কারণে বিএনপির সমাবেশের দিন ইন্টারনেটের গতি কমে যায়
দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপির ধারাবাহিক গণসমাবেশ চলছে। চট্টগ্রাম ছাড়া প্রায় প্রতিটি সমাবেশের দিনই সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটের গতি কমে যায়। মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর সূত্র জানায়, সরকারি নির্দেশনায় তারা সমাবেশের দিন নির্দিষ্ট এলাকার ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়।
বিএনপির প্রথম বিভাগীয় গণসমাবেশ হয় গত ১২ অক্টোবর, চট্টগ্রামে। এরপর পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরে সমাবেশ করেছে দলটি। চট্টগ্রাম ছাড়া পরবর্তী প্রতিটি সমাবেশের সময় মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরে সমাবেশের দিন থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু টু-জি সেবা সচল ছিল, যার মাধ্যমে শুধু মোবাইল ফোনে কথা বলা যায়। অবশ্য সমাবেশ শেষ হওয়ার পরপরই ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে এ বিষয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চায় না।
বিরোধী দলকে আটকানোর জন্য যত উপায় মাথায় আসে, তার সবই ক্ষমতাসীনেরা ব্যবহার করে থাকে। ইন্টারনেটের গতি কমানোটা সেটারই অংশ।আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, পরিবহন ধর্মঘটের মতো ইন্টারনেটের গতিও সরকারের নির্দেশনায় করা হয়। যাতে বিএনপির সমাবেশ ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করতে না পারে এবং যোগাযোগ অ্যাপ ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য এমনটা করা হয়।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ। কর্মসূচি ঘিরে ইতিমধ্যে আশপাশের জেলায় পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট পরিস্থিতি কী হয়, সেটা সমাবেশ শুরুর পর বোঝা যাবে। এরপর ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় দলটির গণসমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিটিআরসি এমন কোনো নির্দেশনা দেয় বলে তাঁর জানা নেই। তবে প্রযুক্তিগত কোনো সমস্যার কারণে হয়তো সেখানে গতি কম পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া কোথাও বেশি মানুষের সমাগম ঘটলে সেখানে স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক প্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।
প্রযুক্তিগত কোনো সমস্যার কারণে হয়তো সেখানে গতি কম পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া কোথাও বেশি মানুষের সমাগম ঘটলে সেখানে স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক প্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।মো. মহিউদ্দিন, বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান
মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের সূত্র জানায়, কোনো এলাকায় নিজ উদ্যোগে ইন্টারনেট বা মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের মতো জরুরি সেবা ব্যাহত করার এখতিয়ার তাদের নেই। তবে সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় মানুষের বড় ধরনের সমাগম হলে সেখানে মুঠোফোন অপারেটরগুলো নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, যাতে ব্যবহারকারীরা সেবা পেতে সমস্যায় না পড়েন।
পরিবহন ধর্মঘট ও ইন্টারনেটের গতি কমানোকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা হিসেবে দেখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিরোধী দলকে আটকানোর জন্য যত উপায় মাথায় আসে, তার সবই ক্ষমতাসীনেরা ব্যবহার করে থাকে। ইন্টারনেটের গতি কমানোটা সেটারই অংশ।