মানুষের মধ্যে ধারণা হচ্ছে, সরকার ইচ্ছা করে নির্বাচন বিলম্ব করছে: মির্জা ফখরুল
অনির্বাচিত সরকারের হাতে দীর্ঘকাল ক্ষমতা থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সংস্কার চাই, আমরা সংস্কার বেশি চাই। কিন্তু আমরা এটাও চাই, দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকা উচিত নয়।’
আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৭ বছর করা সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল নির্বাচন প্রলম্বিত করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এটা করতে গিয়ে আরও সময় যাবে, আরও সময়ক্ষেপণ হবে, আরও বিলম্ব হবে। আমার না কিন্তু…. কেন জানি না মানুষের মধ্যে একটা ধারণা হচ্ছে, এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বিলম্ব করছে, এটা করা সঠিক নয়।’
গতকাল শুক্রবার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে দুই দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে ‘জনমনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এখন তা হলে কী করতে হবে? নতুন করে আবার ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। আমি মনে করি যে এই বিষয়কে এভাবে না বলে, এ নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে তারপরে এই বিষয় আনতে পারলে ভালো হতো, কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। এখন তো আরও বেশি করে মানুষ আশাহত হয়ে যাবে। এট দ্য সেম টাইম মানুষের মধ্যে নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বিলম্ব করার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।’
বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আপনি তো প্রধান নির্বাহী, আপনি প্রথমেই বলে দিচ্ছেন যে ১৭ বছর হলে ভালো। আপনি যখন বলছেন, তখন নির্বাচন কমিশনকে এটা করতে বাধ্য করছেন, যেটা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। যদি এক বছর কমাতে চান, তাহলে সেটা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব করুক, যারা নতুন হয়েছে। এই বিষয় নির্বাচন কমিশনকে ছেড়ে দিন। তারা সিদ্ধান্ত নেবে… কিন্তু উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যখন বলে দেন, তখন এটা একটা চাপ তৈরি হয় নির্বাচন কমিশনের জন্য।’
‘দ্রুত নির্বাচনের দাবি’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে আবারও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, মুহাম্মদ ইউনূসের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। এবং আমরা যেটা চাই যে তারা সফল হোক এবং এ জন্য সব রকম সহযোগিতা করতে আমরা তৈরি আছি। সবচেয়ে বেশি অনুরোধ করব, দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’
তা না হলে সমস্যাগুলোর সংকট বাড়তেই থাকবে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বলেন, বর্ডার (সীমান্ত) সমস্যা বলেন, স্যাবোটাজ করার যে ঘটনাগুলো হচ্ছে, এই ঘটনাগুলো কমানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল গতকাল জাতীয় সংলাপে অর্ধনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের দেওয়া বক্তব্যের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এখনো কিন্তু মানুষ স্বস্তি পায়নি। গতকাল একটা অনুষ্ঠানে ছিলাম, সেখানে অধ্যাপক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বক্তব্যে বলেছিলেন, খুব ভালো কথা, সংস্কার তো সবাই চায়, কিন্তু স্বস্তি চায়… বাজারে স্বস্তি চায়, রাস্তায় বেরিয়ে খুন হয়ে যাবে না—সেটা চায়, গাড়ি এক্সিডেন্ট করে ছয়–সাতজন মারা যাবে না, সেটা চায়।’
সরকার আরও বেশি গভর্ন্যান্সের দিকে নজর দেবেন—আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ব্যাংকের সব টাকা লুট করে নিয়ে চলে গেল, তাদের বিরুদ্ধে তো একটা মামলাও শুরু হলো না। অন্য মামলা হচ্ছে, যেটা আগের মতো সেই পুরোনো … অজ্ঞাতনামা ১০০০/১৫০০ আসামি… ওই একই কায়দায় আবার একটা বাণিজ্য করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো বন্ধ না করলে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে জায়গা পৌঁছাতে চাচ্ছেন, সেই জায়গায় আপনি পৌঁছাতে পারবেন না।’
‘এক শ-দুই শ দল হোক, আপত্তি নাই’
আরও দুই-তিনটা দল গঠিত হবে বলে শুনতে পাচ্ছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনপ্রক্রিয়াতে আরও দুই-তিনটা দল যদি গঠিত হয় আমাদের কোনো আপত্তি নাই। এক শ হলে, দুই শ হলে তাতেও আপত্তি নাই।’
তবে রাজনীতিতে এই নতুন প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্য বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে জাতির জন্য কতটুকু কাজে লাগবে, সেটাই সবাই চিন্তা করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে একটা সমস্যা কী জানেন, আমরা সবাই রাজনীতিবিদ। দেখবেন, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে, চর্চা করতে আমরা পছন্দ করি। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া মারাত্মকভাবে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে সবাইকে রাজনীতিবিদ হওয়ার, সবাইকে সাংবাদিক হওয়ার, সবাইকে ইউটিউবার হওয়ার, সবাইকে ফিলিসোফার হওয়ার।’
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ন্যাপ চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকী প্রমুখ।