কোটা সংস্কার আন্দোলন: সরকার কঠোর অবস্থানে, তবে আলোচনাও চায়
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দিনভর সংঘর্ষ ও ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনার পরও সরকার কঠোর অবস্থান থেকে সরছে না। আন্দোলন দমনে রাজনৈতিক ও সরকারি শক্তি ব্যবহার অব্যাহত রাখার কথা বলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এই আন্দোলনকে এখন সরকার উৎখাতের আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মহল সক্রিয় তৎপরতা চালাচ্ছে বলে তাঁরা মনে করছেন। সে কারণে তাঁদের নমনীয় হওয়ার সুযোগ নেই।
তবে প্রাণহানির ঘটনায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে ও সংকট বেড়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা রয়েছে আওয়ামী লীগ ও সরকারের মধ্যে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, কঠোর অবস্থান দৃশ্যমান থাকলেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা দরকার। কারণ, সরকারও কোটাব্যবস্থার সংস্কার চাইছে। আলোচনার ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভেতরে-ভেতরে সরকারের একটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন তাঁরা। যদিও আন্দোলনকারীদের দিক থেকে আলোচনার প্রশ্নে কিছু জানা যায়নি।
একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছেন, এখন যেকোনোভাবে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন থামানোই তাঁদের লক্ষ্য। ফলে আলোচনা যদি না হয়, তাঁদের কঠোর অবস্থান অব্যাহত রেখেই এগোতে হবে। তাঁরা বলছেন, এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সরকার।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার জন্য দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র চলছে।
কোটা সংস্কারের আন্দোলন মোকাবিলা করার লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সক্রিয় রয়েছে ছাত্রলীগ। এখন আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোকেও রাজপথে নামানো হবে। এ ছাড়া আজ বুধবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দলীয় কাউন্সিলরদের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি তুললেও সেই দাবি মানা সম্ভব নয়। এতে আওয়ামী লীগেরও রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। পরিস্থিতি সামলাতে সরকার ও আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত থাকছে।
তবে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ায় হতাশা আছে ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে। কোনো কোনো নীতিনির্ধারক মনে করেন, এ ক্ষেত্রে সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। এ জন্যই এখন অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে হচ্ছে। ফলে জনমত বিপক্ষে চলে যাচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে আদালতের সিদ্ধান্তের জন্যও অপেক্ষার কথা বলা হচ্ছে। সে জন্য উচ্চ আদালতের মাধ্যমে কোটা সংস্কার ইস্যুর একটা যৌক্তিক সমাধানে আরও তৎপর হওয়ারও চেষ্টা আছে। অর্থাৎ আদালত যে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছেন, তা এগিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় গতকাল লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল ঢাকায় এক সেমিনারে বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না।
কিন্তু বিষয়টি আদালতে থাকলেও সরকার চাইলে সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে পারে, বিভিন্ন মহল থেকেই এমন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারের দিক থেকে যেহেতু আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার চিন্তাও রয়েছে, ফলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের তাগিদ আসতে পারে। তবে আলোচনা হলেও আদালতের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই সমাধানের অবস্থানেই সরকার রয়েছে।
আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, কোটা সংস্কার নিয়ে জনমত সরকারের বিপক্ষে যাচ্ছে। ফলে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় অনড় যে এই আন্দোলন যেকোনো মূল্যে দমাতে হবে। দু-এক দিনের মধ্যেই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে বিপদ আরও বাড়তে পারে বলে তাঁরা মনে করেন।