বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে যাঁর যে অবদান, তাঁর স্বীকৃতির মাধ্যমে সবাইকে যথাযথ সম্মান জানালে দেশের অগ্রগতির জন্য তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আজ শুক্রবার বিকেলে ‘স্বাধীনতাযুদ্ধ ও সিরাজুল আলম খান’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এ অভিমত দেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে ‘স্বাধীনতাসংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও নিউক্লিয়াসের প্রধান সিরাজুল আলম খান দাদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজন করে সিরাজুল আলম খান (এসএকে) ফাউন্ডেশন ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ট্রাস্টি শামসুদ্দিন পেয়ারা।
সভায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী, অনুরাগী, জাসদের বিভিন্ন অংশের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। এতে নবীন–প্রবীণ নেতা–কর্মীদের এক সম্মিলনী হয়ে ওঠে আলোচনা সভা।
মূল প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যেমন চিরকাল আমাদের রাজনৈতিক প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে, একইভাবে সিরাজুল আলম খানও তরুণ প্রজন্মের কাছে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উজ্জ্বলতম পথনির্দেশক হয়ে থাকবেন।’
আলোচনায় জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে বাংলাদেশের দাবি ফুটিয়ে তোলার বহুমাত্রিক কৌশলের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর সিরাজুল আলম খান ছিলেন সেই কৌশল বাস্তবায়ন করার বলিষ্ঠ কারিগর। তাঁর ভূমিকা ছিল কিংবদন্তিতুল্য।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, সিরাজুল আলম খান রাজনীতির গতিমুখ পরিবর্তন করেছিলেন। তরুণদের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যের দিকে আন্দোলনকে বেগবান করছিলেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্যও তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে ‘জনযুদ্ধ’ ছিল বলে উল্লেখ করেন বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান। তিনি বলেন, দল ও ব্যক্তির ইতিহাসকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়নি। অনেকেই রাজনীতির তত্ত্ব উপস্থাপন করতে পারেন। কিন্তু সিরাজুল আলম খানের বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি তাঁর ভাবনাকে বাস্তবে পরিণত করতে পেরেছিলেন।
অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘একটি জাতির ইতিহাসের অনেক নির্মাতা থাকেন। কোনো একজন বা দুজন ইতিহাস নির্মাণ করতে পারেন না। তাঁদের কোনো একজনকে মূল্যায়ন করলে অন্যদের অবস্থান খাটো হয়ে যায় না। সিরাজুল আলম খান আমাদের ইতিহাসের নির্মাতাদের অন্যতম একজন।’
সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতা নিয়ে ভিন্নভাবে ভেবেছিলেন এবং তা প্রয়োগ করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে নিউক্লিয়াস গঠন ও এর ভূমিকা সিরাজুল আলম খানের চিন্তা ও সাংগঠনিক শক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে যা কখনো কেউ মুছে ফেলতে পারবেন না।
নাগরিক অধিকারবিষয়ক সংগঠন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ষাটের দশকের আন্দোলনে সিরাজুল আলম খান যদি তাঁর ভূমিকা না রাখতেন, তাহলে স্বাধীনতাপ্রাপ্তি এত ত্বরান্বিত হতো না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্র এখন ‘মাফিয়া চক্রকবলিত’ হয়েছে। এমন সময় তরুণ প্রজন্মকে সংগঠিত করার জন্য সিরাজুল আলম খানের মতো আদর্শিক নেতার বড় প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে আবু সাঈদ খান বলেন, সিরাজুল আলম খানের যে সম্মান প্রাপ্য ছিল, রাষ্ট্র তাঁর প্রতি সেই সম্মান জানায়নি। হয়তো তাঁর রাজনীতির পদ্ধতিতে কোনো ত্রুটি ছিল। তা নিয়ে সমালোচনা হতে পারে। কেউ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। তবে তাঁকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করা হলে তা ইতিহাসকেই ত্রুটিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করার শামিল হবে।
আলোচনায় আরও অংশ নেন ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি এ বি এম হারুন, জেএসডির সহসভাপতি এম এ আওয়াল, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ। সভাটি সঞ্চালনা করেন ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব ফারাহ খান।