দলবিরোধী কাজের জন্যই মসিউরকে অব্যাহতি, বললেন জাপার মহাসচিব
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক (চুন্নু) বলেছেন, সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্যই মসিউর রহমানকে (রাঙ্গা) দলের পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক।
গতকাল বুধবার জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় মসিউর রহমানকে (রাঙ্গা)। জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে এই অব্যাহতি দেন।
আজ মসিউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেন মুজিবুল হক। তিনি বলেন, গেল এক বছর গণমাধ্যম, সংসদ ও বিভিন্ন ফোরামে মসিউর রহমান সংগঠনের নীতি ও অবস্থানবিরোধী কথা বলছিলেন। এক মাস আগেও এমন একটি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন মসিউর রহমান। তখন সংগঠনবিরোধী কোনো কাজ করবেন না বলেও অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি। তবে মসিউর রহমানের প্রতি পার্টির সিদ্ধান্ত গঠনতন্ত্র ও বিধি মোতাবেক হয়েছে।
মসিউর রহমান জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও দলের সাবেক মহাসচিব। তিন দিন আগে তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার রেশ ধরেই মসিউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
গত ৩০ আগস্ট জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ হঠাৎ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠান। তাতে তিনি নিজেকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করে আট সদস্যের কমিটিও ঘোষণা করেন। এর পরদিনই জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভা ডেকে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে জাপার চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় মসিউর রহমানও অংশ নেন ও সভার কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষরও করেন। পরে তাঁর নেতৃত্বেই সংসদীয় দলের সিদ্ধান্ত স্পিকারের কাছে পৌঁছানো হয়। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত এখনো কার্যকর হয়নি।
আজ সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বিদেশে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া তিনি হঠাৎ নভেম্বরে একটি কাউন্সিল ঘোষণা করেছেন। সেখানে তিনি আহ্বায়ক হয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যানদের যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।
অথচ আমরা কেউই এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আবার যাঁকে সদস্যসচিব করা হয়েছে, তিনি জাতীয় পার্টির প্রাথমিক সদস্যও নন। আবার বিরোধীদলীয় নেতার অনুপস্থিতিতে সংসদের অনেক কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’
মুজিবুল হক বলেন, যদি জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান চান, তবেই মসিউর রহমান জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন। কারণ, কাউকে পার্টিতে ফেরানোর এখতিয়ার শুধু জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের। এ সময় তিনি বলেন, কেউ দল থেকে চলে যেতে পারেন, তাতে দলের কোনো ক্ষতি হয় না। অনেকেই চলে গেছেন কিন্তু জাতীয় পার্টি তার স্থানেই আছে। জাতীয় পার্টি কেউ ভাঙতে পারবে না। জাতীয় পার্টি এখন অনেক শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, এখন গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার সমালোচনা করছেন মসিউর রহমান কিন্তু যখন মহাসচিব ছিলেন, তখন তো এই ধারার কথা কখনোই বলেননি তিনি।
আজ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান, ফখরুল ইমাম, সফিকুল ইসলাম প্রমুখ।