ভারত উসকানি দিয়ে বিভেদের রাজনীতিকে প্রকট করে তুলেছে

‘ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও জনগণ’ শীর্ষক বিক্ষোভ সমাবেশ ও পদযাত্রার আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্ট। প্রেসক্লাবের সামনে, ঢাকা ৪ ডিসেম্বরছবি: আশরাফুল আলম

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারত শেখ হাসিনার পতন মেনে নিতে পারেনি। সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ যখন জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বীর আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষের আত্মত্যাগের দৃশ্যে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি, তখন ভারত এই গণ-অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছে। ভারতের গোলামির জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়নি।দিল্লির দাসত্ব ভেঙে দিতে সব ধর্মের মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে।

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে আজ বুধবার সকালে ‘ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও জনগণ’ শীর্ষক বিক্ষোভ সমাবেশ ও পদযাত্রার আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্ট। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এ মন্তব্য করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে ভারতের গণমাধ্যম লাগাতার অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে চলেছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার সেই অপপ্রচার বন্ধ না করে বরং তাতে উসকানি দিয়ে বিভেদের রাজনীতিকে প্রকট করে তুলেছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা মমতাকে এত দিন অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী বলেই জানতাম। কিন্তু এখন দেখা গেল, সেটি ছিল তার কেবল বহিরাবরণ। মনের ভেতরে তিনিও ভীষণ কট্টর হিন্দুত্ববাদীদেরই মতো।’

ভারতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতিত হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, মুসলিম, শিখ, খ্রিষ্টান, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও নিম্নবর্ণের মানুষের ওপর প্রতিনিয়ত সেখানে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সেই নির্যাতন বন্ধে তাঁদের সোচ্চার হতে দেখা যায় না। বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা হয়েছে, জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা নিজেরাই ভিন্ন দেশের দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন না। কাজেই তাঁদের দেশেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন প্রয়োজন।

বাংলাদেশে যে যে ধারার রাজনীতিই করুক না কেন, এখানে কখনো কোনো ধর্মের প্রতি ঘৃণা–বিদ্বেষ ছড়ানো হয় না বলে দাবি করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এখানে কেউ সংখ্যালঘু নয়। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সবার সমান অধিকার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গেই ভিন্ন ধর্মের প্রতি প্রবল বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, অন্যদের বিষয়ে কথা বলার আগে নিজের দেশে বৈষম্য ও বিভেদের রাজনীতি বন্ধ করেন।

পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্টের সহসভাপতি দেবাশীষ রায় বলেন, ‘আমাদের দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলমান—সবাই সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছে। এই সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা কেউ নিজেদের সংখ্যালঘু মনে করি না। আমরা সবাই বাঙালি।’ ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা না দিতে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দেব জয় বলেন, বাংলাদেশের হিন্দুদের ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করে বাজি জেতার দিন শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দুরা এখানে শান্তিতে আছে, নিরাপদে আছে। তাদের নাম ভাঙিয়ে পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা তার অনুগত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীকে দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। কিন্তু এই চক্রান্ত সফল হবে না।

বিএনপির ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস বলেন, ভারতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে। সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়েছে। বাংলাদেশের ভূমি দখলের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তাদের জেনে রাখা উচিত, এ দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলিম—সবাই এক হয়ে যেমন ১৫ বছরের স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে, তেমনি ঐক্যবদ্ধভাবে সব সম্প্রসারণবাদী শক্তিকে প্রতিহত করবে। জীবন দিয়ে দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করা হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্টের নেতা সুরঞ্জন ঘোষ, গৌতম মিত্র, বিএনপি নেতা সরফত আলী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সাংগঠনিক সম্পাদক হানিফ খানসহ অনেকে। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বসু।

সভাপতির বক্তব্যে পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্টের সভাপতি অপর্ণা রায় বলেন, ভারতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়েছে। মোদি সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশে কিন্তু কোনো ভারতীয় দূতাবাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। এ দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতের আগ্রাসী তৎপরতার জবাব দেবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে দেশবিরোধী যড়যন্ত্র চালাচ্ছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, তাঁকে দেশে এনে বিচার করা হবে।

সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয় পর্যন্ত প্রতিবাদী পদযাত্রা করা হয়।