ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ২২ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতা, ব্যবসায়ী, চিত্রনায়ক রয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার শেষ দিন ১০ জন নতুন করে ফরম কিনেছেন। এর মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল হাফিজ মল্লিক, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, প্রয়াত সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠানের ছেলে রৌশন হোসেন পাঠান, চলচ্চিত্রের খলনায়ক ড্যানি সিডাক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল, আওয়ামী লীগের নেতা তাহসিন মাহবুব, বনানী থানা আওয়ামী লীগের নেতা মো. নাছির ও লতা নাসির, তাঁতী লীগের নেতা সৈয়দ তানভীর ইমাম।
গত শনিবার থেকে এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। আজ ছিল ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার শেষ দিন। আগামী ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন হবে। এই ভোট হবে কাগজের ব্যালটে। গত ১৫ মে চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) মারা যাওয়ার পর এই আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়।
এর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাতও (মোহাম্মদ এ আরাফাত) মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। এত দিন আরাফাত আওয়ামী লীগের হয়ে নানা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত ছিলেন। টক শোতে আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষে কথা বলেছেন। গত ডিসেম্বরে প্রথমবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হন তিনি। এবার সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে তিনি শামিল হলেন।
দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দুই সহসভাপতি ওয়াকিল উদ্দিন ও আবদুল কাদের খান। এ দুজন দীর্ঘদিন ধরেই এই আসনে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু জোট কিংবা অন্য রাজনৈতিক সমীকরণের কারণে তাঁদের বিমুখ হতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, এই উপনির্বাচনের প্রার্থী ঠিক করতে আগামী শনিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হতে পারে।
বর্তমান জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে কারণে এ আসনে উপনির্বাচনে যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি সংসদে বসার সুযোগ পাবেন মাত্র মাস চারেক। এত কম সময়ের জন্য হলেও এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, দলের নেতা ও চিত্রজগতের ব্যক্তিদের দৌড়ঝাঁপ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। উপনির্বাচনে মনোনয়ন পেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত—এমনটাই মনে করছেন আগ্রহী ব্যক্তিরা।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ফরম সংগ্রহ করা অন্য নেতারা হলেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন; বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জসিম উদ্দিন; ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক কানিজ ফাতেমা সুলতানা; যুবলীগের সাবেক নেতা আবদুল খালেক; সেনানিবাস থানা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আবু সাঈদ; বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নজরুল ইসলাম তমিজি; সাবেক সচিব মোহাম্মদ মুসা; গুলশান থানা আওয়ামী লীগের নেতা আরাফাত আশওয়াদ ইসলাম ও অভিনেতা মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এবারের উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্র মিলে অনেকেই ভোট করবেন। আর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটের ধারাবাহিকতায় এখানে সুষ্ঠু ভোট হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীর এই উপনির্বাচনে কোনো বদনাম নিতে চাইবে না আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করবে দলটি।
সূত্র আরও বলছে, এই আসনের উপনির্বাচনে তিনটি পক্ষ রয়েছে। প্রথমত, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও তারকা। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় নেতা। তৃতীয়ত, স্থানীয় নেতা। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই।
শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে জসিম উদ্দিনও চেষ্টা চালাচ্ছেন বেশ কিছুদিন ধরে। তবে তাঁর ভাই মোরশেদ আলম নোয়াখালী-২ আসনের (সেনবাগ-সোনাইমুড়ীর একাংশ) সংসদ সদস্য। ফলে একই পরিবারে আরেকজনকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি আছে বলে মনে করেন না আওয়ামী লীগের নেতারা।
চিত্রনায়ক ফেরদৌস আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপকিমিটির সদস্য। দলের নানা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। নায়ক ফারুকের শূন্য আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। তারকা ইমেজের কথা বিবেচনায় নিলে ফেরদৌসকে মনোনয়ন–দৌড়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন দলের কোনো কোনো নেতা।