বিএনপির সমাবেশ
তারুণ্যের রোডমার্চ শেষে আসছে বিএনপির কর্মসূচি
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে এই সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গায়েবি মামলা দিয়ে আটক করা হচ্ছে।
রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে দুই দিনের ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ শেষে ১৮ সেপ্টেম্বর নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেবে বিএনপি। আজ শনিবার রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত, পরদিন রোববার বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত এই রোডমার্চ হবে। এরপর ‘এক দফা’ দাবিতে আগামী সোমবার যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘সবাই একমত, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। জাতীয় পার্টির নেতারাও বলেছেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সুতরাং আমরা এক দফা দাবিতে আবারও কর্মসূচি দেব। ১৮ তারিখে ঘোষণা করব।’ বিকেলে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এক দফা কর্মসূচিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই আন্দোলনে সবাই এক হয়ে আছে।
‘গায়েবি’ মামলার কারণ একটাই—নির্বাচন
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন ছুতোয় বিরোধী দলের নেতাদের গায়েবি মামলা দিয়ে আটক করা হচ্ছে। কারণ একটাই, সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে সব বিরোধী দলকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।
সকালের সংবাদ সম্মেলনেও মির্জা ফখরুল পুরোনো ‘মিথ্যা’ ও ‘গায়েবি’ মামলায় গ্রেপ্তার শুরুর অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জামালপুরে ৩৬ দিনে ৩০টি গায়েবি মামলা দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে বলেন, একই ঘটনা ঢাকায়ও হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এমন কোনো থানা নেই, যেখানে সাধারণ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নেই। কয়েক বছর ধরে নেতা-কর্মীরা ঘরে থাকতে পারেন না। এটাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায় কি না, এমন প্রশ্ন রেখে ফখরুল বলেন, ‘দুঃখ হয়, উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা এই ব্যবস্থাকে সমর্থন করছেন।’
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে কারাদণ্ড দেওয়ার সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার থাকার কারণে তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এখন পুরোপুরিভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে, দলীয়করণ হয়ে গেছে। তিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় শুধু গণতন্ত্র নয়, দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে।
আমরাও অবাক হয়েছি
নয়াপল্টনের সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেছেন, “আমি এত ভালো ভালো নির্বাচন করি, আর দেশে-বিদেশে প্রশ্ন করে নির্বাচন ভালো হয় না।” এটা এ বছরে বাংলাদেশে শ্রেষ্ঠ কৌতুক।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (সংসদে) বলেছেন, তিনি অবাক হচ্ছেন, নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছে কেন, প্রশ্ন হচ্ছে কেন? আমরাও তাঁর কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি। কারণ, বাংলাদেশের সব মানুষ জানে নির্বাচন হয় না, ভোট হয় না। বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারে না। দুটি নির্বাচন ওনাদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। একটা হয়েছে ২০১৪ সালে বিনা ভোটে। আরেকটা হয়েছে ২০১৮ সালে আগের রাতে।’
তরুণদের বেরিয়ে আসার আহ্বান
আজ রংপুর থেকে তারুণ্যের রোডমার্চের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তরুণদের জেগে উঠতে হবে। শুধু স্লোগান দিলে হবে না, সামনে বেরিয়ে আসতে হবে। গুলি, আক্রমণ—সবকিছুকে সামনে নিয়ে দেশকে যদি বাঁচাতে চাই, আমাদের সামনে এগিয়ে আসতে হবে। আর কালবিলম্ব নয়। এখনই সময়, আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে চায় না। কারণ তারা জানে, যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, যদি জনগণ ভোট দিতে যেতে পারে, তাহলে তারা ১০টা আসনও পাবে না। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র দিবসে আমাদের শপথ হচ্ছে, এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। কোনো নির্বাচন হবে না নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া। এই আন্দোলনে আমরা একা নই। আমাদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক বিশ্ব আছে।’ তিনি এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে সরকার নতুন ফন্দি এঁটেছে। তারা ৩০০ কোটি টাকার গরু-ছাগল বিতরণ করবে। দেশের মানুষের টাকা লুট করে এখন তারা ‘জুতা মেরে গরু দান’ করবে। দেশের মানুষ গরু-ছাগল চায় না। তাদের ভোটের অধিকার দেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে কিছু দুর্বৃত্ত রাজনীতিক, লুটেরা ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা, দলীয় পুলিশ বাহিনী মিলে একটা লুটেরা শাসন তৈরি হয়েছে। বিএনপির আন্দোলন এই লুটেরা শাসনের বিরুদ্ধে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আশা করি, আমরা অচিরেই এই ভোট ডাকাতদের পদত্যাগে বাধ্য করব। যদি এই সরকার আর বেশি দিন থাকে, বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির প্রমুখ।