ঢাকায় এক লাখ মানুষের জমায়েত করতে চায় আ.লীগ
বিএনপির সমাবেশের দিন আগামী বুধবার বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের সমাবেশ হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে। দলটির লক্ষ্য—ওই দিন এক লাখ মানুষের জমায়েত করা। এ জন্য ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে ৫০ হাজার করে মানুষ আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা।
কেন্দ্রীয় ও দুই মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বর থেকে বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে যত কর্মসূচি পালন করেছে তারা, এর সবগুলোই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আলাদা আলাদাভাবে পালন করেছে। এমনকি যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নিজেদের মতো করে সভা-সমাবেশ করেছে। কিন্তু বুধবার দুই মহানগর যৌথভাবে সমাবেশ করবে। এ ছাড়া সহযোগী সংগঠনগুলোকেও এতে অংশ নিতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত তাদের আগে থেকেই ছিল। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনের বছর দল বড় জমায়েত করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে পাল্টাপাল্টির কোনো সম্পর্ক নেই।
রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের দূরত্ব দেড় কিলোমিটারের কম। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ ডেকেছে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে। সমাবেশও হবে কাছাকাছি সময়ে। বিএনপির সমাবেশ বেলা দুইটায়। আর আওয়ামী লীগের সমাবেশ করবে বেলা তিনটায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস বাকি থাকতে স্বল্প দূরত্বে এবং এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি সমাবেশ শান্তিপূর্ণ রাখা একটা চ্যালেঞ্জ।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়াসহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আসছে। এসব সফরকে গুরুত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজপথে সক্রিয় থেকে তাদের রাজনৈতিক শক্তি দেখাতে চাইছে।
আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, তাদের বড় জমায়েতের উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমত, এর মাধ্যমে বিএনপিসহ বিরোধীদের চাপে রাখা। তারা বিরোধীদের বার্তা দিতে চায় যে রাজপথের নিয়ন্ত্রণ এখনো আওয়ামী লীগের হাতেই আছে। বড় জমায়েতের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে, বিদেশিদের দেখানো। আওয়ামী লীগ দেখাতে চায়, তাদেরও জনসমর্থন বিপুল।
গত রোববার দুই সপ্তাহের সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছে। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত তারা সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়াসহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আসছে। এসব সফরকে গুরুত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজপথে সক্রিয় থেকে তাদের রাজনৈতিক শক্তি দেখাতে চাইছে।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি যত দফার আন্দোলনই করুক, আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলে তারা সুবিধা করতে পারবে না। গত ডিসেম্বরের পর তা প্রমাণ হয়ে গেছে। ফলে বিএনপির দফার চেয়ে আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে রাখাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে।’ ওই নেতা আরও বলেন, সরকারের পক্ষে কূটনীতিকেরা তাদের চ্যানেলে বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এর বাইরে রাজনীতিতে এখন একধরনের মনস্তাত্ত্বিক খেলা চলছে। এ খেলায় আওয়ামী লীগ নিজেদের এগিয়ে রাখতে চায়। এ জন্যই আওয়ামী লীগ সরকারে থেকেও বিরোধী দলের মতো রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করছে। এতে সংঘাতের শঙ্কা থাকলেও পিছু হটার সুযোগ নেই।
বুধবারের সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করেছে। বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের বুধবারের সমাবেশে বেশি করে জমায়েত নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এখন থেকে স্বল্প সময়ের নির্দেশে জমায়েত করার মতো প্রস্তুতি রাখার জন্য ঢাকায় আওয়ামী লীগের সব ইউনিটের নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মহানগরের সব স্তরের এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল নেতাদের নিয়ে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছে। এখন থেকে সেখানে সময়-সময় নির্দেশনা ও পরামর্শ দেওয়া হবে। তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার কারওয়ানবাজারের টিসিবি ভবনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি সভা ডেকেছে। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল থাকবেন। মূলত বুধবারের সমাবেশ এবং অন্যান্য কর্মসূচিতে সমন্বিতভাবে লোক জমায়েত নিশ্চিত করাই এই বৈঠকের লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত তাদের আগে থেকেই ছিল। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনের বছর দল বড় জমায়েত করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে পাল্টাপাল্টির কোনো সম্পর্ক নেই।