বেনজীর-আজিজ আমাদের লোক নয়: কাদের
দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়া সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ আওয়ামী লীগের লোক নয় বলে দাবি করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জ্যেষ্ঠতা ও মেধার ভিত্তিতে তাঁরা দায়িত্ব পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস এবং ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিনিধি সভায় এসব কথা বলেন কাদের।
বেনজীর আহমেদ ও আজিজ আহমেদ আওয়ামী লীগের লোক নয় জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বেনজীর আমাদের দলের লোক নয়। জ্যেষ্ঠতা ও মেধা নিয়ে সে আইজিপি হয়েছে। আজিজও আমাদের দলের লোক নয়। তার যোগ্যতায় ও জ্যেষ্ঠতার কারণে সেনাপ্রধান হয়েছে। এখন ভেতরে তারা যদি কোনো অপকর্ম করে, এটা যখন সরকারের কাছে আসে তখন এদের বিচার করার সৎ সাহস শেখ হাসিনার আছে।’
বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনাদের সময় কেউ শাস্তি পায়নি। আপনাদের দলের নেতা নিজেই দুর্নীতিবাজ। সিঙ্গাপুর থেকে কোকোর টাকার একটা অংশ আনতে পেরেছি। এফবিআই ঢাকায় এসে তারেকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শৃঙ্খলাভঙ্গ করে কাউকে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাবের, প্রশাসনের বড় পদে বসায়নি। ৮ জনকে পাশ কাটিয়ে ৯ নম্বর ব্যক্তি মইন উ আহমেদকে সেনাপ্রধান করেছে। কে করেছে? খালেদা জিয়া। আশরাফুল, রকিবুল হুদা, কোহিনূর কার সৃষ্টি? মির্জা ফখরুল অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছেন। ভুলে গেছেন, আপনার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অস্ত্র চোরাচালান, মানি লন্ডারিংয়ের মামলায়, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশে-বিদেশে সর্বত্রই একজন সৎ পলিটিশিয়ান হিসেবে পরিচিত। তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের প্রধান প্রধান নেতা কে দুর্নীতিবাজ? সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে আসেন। দুর্নীতিবাজ আপনাদের দলের চোরের রাজা, চোরের মহারাজা সবই বিএনপি। বিএনপি দুর্নীতিবাজদের জন্মদাতা।’
টিআইবি ও সুজনের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজ টিআইবি একটা আছে, সুজন আছে, সুজন না কুজন জানি না। ফখরুল, গয়েশ্বর যে সুরে কথা বলে, তারাও একই সুরে কথা বলে। আজ মানুষের প্রশ্ন, টিআইবি ও সুজন কি বিএনপির “বি” টিম? যে সুরে কথা বলে, কোনো পার্থক্য নেই, একই সুরে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে।’
‘দলের নেতা-কর্মীদের কারও কোনো অসুবিধা থাকলে, সচ্ছলতায় ঘাটতি থাকলে দলকে জানানো কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের অসচ্ছল, অসুস্থ লোককে খবর পেলেই তিনি ব্যবস্থা নেন। চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, অসচ্ছলতার ব্যাপারে তাঁর সদয় দৃষ্টি আমরা দেখতে পাই।’
দলের নেতা-কর্মীদের অনুরোধ জানিয়ে কাদের বলেন, ‘দলের বদনাম করে কেউ কোনো অপকর্ম করবেন না। সত্য সত্যই। বাইরে থেকে বেনজীরকে আমরা যেভাবে দেখেছি, তিনি যে আরেক বেনজীর ভেতর থেকে, সেটা তো এখন সত্য হয়ে দেখা দিচ্ছে। একজন মানুষের চলতে-ফিরতে কত লাগে?’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চা করে। আমাদের দল জন্মলগ্ন থেকেই দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা হয়। আমি তৃতীয়বারের সাধারণ সম্পাদক। আমাদের একটা সম্মেলন কেউ বলতে পারবে না সময়রেখা অতিক্রম করেছে। আমরা ডিসেম্বরের সময়সীমার মধ্যেই জাতীয় সম্মেলন সম্পন্ন করি। আগামী সম্মেলনও ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে আমাদের জাতীয় সম্মেলন হবে।’
ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ মহানগরের বিভিন্ন কমিটি গঠনের বার্তা নিয়ে এসেছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেরিতে হলেও কাজটি অনেক দিন ধরে নেতা-কর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। মহানগর দক্ষিণও আমাকে জানিয়েছে, দু-এক দিনের মধ্যে কমিটি জমা দেবে। প্রধান প্রক্রিয়া সমাপ্তির পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছে। উত্তর আগেই কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া শেষ করেছে।’
এই সময় উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা এই প্রস্তাবিত কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছাবেন। ৭ জুন আমরা সারা দেশে ৬ দফা দিবস পালন করব। এরপরই সবার হাতে কমিটি চলে যাবে। এ নিয়ে কেউ শোরগোল করতে পারবেন না। কোনো কথা থাকলে, লিখিত অভিযোগ আমাদের সভাপতির ধানমন্ডি অফিসে জমা দেবেন।’
প্রতিনিধি সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান।