রোজায় বিএনপি যত কর্মসূচি পালন করবে, তত জনবিচ্ছিন্ন হবে: ওবায়দুল কাদের
পবিত্র রমজান মাসে সংযম না করে বিএনপি যতই কর্মসূচি পালন করবে, তারা ততই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভায় এই মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
রমজানে সরকারবিরোধী কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বিএনপি—এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এতে বিএনপির জনসম্পৃক্ততা অব্যাহতভাবে কমতে থাকবে। রোজার মাসে সংযম না করে বিএনপি যতই আন্দোলন করবে, তারা ততই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সহিংসতাকারীদের ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থান তুলে ধরেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোনো অপরাধ ও অপকর্ম যদি সরকারি ছত্রচ্ছায়ায় হয়ে থাকে, তখন সরকার যদি কাউকে ছাড় না দেয়, বুঝতে হবে সরকার এখানে শূন্য সহিষ্ণুতা বজায় রেখেছে।
অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিচার করা হবে, অপরাধী যতই প্রভাবশালী হোক।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বুঝি না। অপরাধী অপরাধীই। অপরাধী যে-ই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর।’
রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের একটা বিষয় আছে। সরকার অত্যন্ত সতর্ক ও সর্বাত্মক প্রয়াস চালাচ্ছে, যাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। শেখ হাসিনার সরকার এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব সংকটের প্রেক্ষাপটেও এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে, যেটা বিএনপির সময় হয়নি। তারা শুধু দাম বাড়াতে পারে। তারা বিরোধিতার নামে বিরোধিতা করে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গতবারের মতো এবারও রমজানে সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো ইফতার পার্টি করা হবে না। এর পরিবর্তে সারা দেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গরিব ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ইফতারি, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ময়মনসিংহ, কুমিল্লা সিটিসহ ২৩৩টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা দেশে একযোগে এই নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক অপপ্রচার হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে অনেক অপবাদ ছড়ানো হয়েছে।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ঈর্ষণীয়। নির্বাচন কমিশন বলছে, এই হার ৬০ শতাংশ। নির্বাচনের প্রতি জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে—এ ধরনের অপপ্রচার যারা করে, তাদের এই অপপ্রচারের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। জনগণের রাজনীতির প্রতি ক্রমে আগ্রহ বাড়ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি প্রমাণ করে, জনগণের নির্বাচনের প্রতি আকর্ষণ, আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেখ হাসিনার হাতেই এ দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচনব্যবস্থা নিরাপদ। এটাই প্রমাণিত হয়েছে সাম্প্রতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। বিশ্ব সংকটে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, তিনি যথার্থ ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ (সংকট ব্যবস্থাপক)। সারা বিশ্বই তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিদেশিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি। তাদের কথায় রাজনীতি করি না। রাজনৈতিকভাবে চরমভাবে পরাজিত, বিপর্যস্ত বিএনপির পায়ের তলার মাটি ক্রমেই সরে যাচ্ছে। দেশের মানুষকে বাদ দিয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ করা—এই অসম্মানজনক কর্মকাণ্ড তারা চালিয়ে যাচ্ছে।’
বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, নিরপরাধ ব্যক্তি এখানে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন না। যাঁরা অপরাধী, সন্ত্রাস করেন, আগুন-সন্ত্রাসে জড়িত, জনগণের জানমাল রক্ষায় তাঁদের ছাড় দেওয়া কোনো দেশপ্রেমিক সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। বিএনপি নেতা-কর্মীদের জেলে থাকা নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শেখ হাসিনা মানবতার প্রতীক। গত ৪৮ বছরে তাঁর অর্জনের ধারেকাছেও কেউ যেতে পারেনি। বিএনপি হচ্ছে খুনি-সন্ত্রাসীদের দল। মানুষ পুড়িয়ে মারার দল। মিস্টার ১০%, দুর্নীতির বরপুত্র বলে তারেক জিয়া দুর্নাম অর্জন করেছেন। তিনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন। বিএনপি তাঁকে যতই নেতা বানানোর চেষ্টা করুক, দেশের জনগণ তাঁকে নেতা হিসেবে মেনে নেবে না। যত দিন তারেক জিয়া থাকবেন, তত দিন বিএনপি স্বাভাবিক কারণে জনবিচ্ছিন্ন ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। বিএনপির মিথ্যাচার এখন দলটির নেতা-কর্মীরাও বিশ্বাস করে না।’
সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।