পিরোজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামানকে পুলিশ নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী হাফিজা আক্তার। তিনি বলেন, ‘সে বিএনপি করে—এটাই তার অপরাধ। যদি বিএনপি করা অপরাধ হয়, তাহলে দেশে কেন দুই দল? এক দল থাকাই তো দরকার।’
আজ সোমবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস উপলক্ষে ‘ভয়েস অব ভিকটিম ফ্যামিলি’–এর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে হাফিজা আক্তার এসব কথা বলেন।
‘পুলিশ হেফাজতে’ মারা যাওয়া বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতা–কর্মীদের স্বজনেরা এই মানববন্ধনে অংশ নেন। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, রাজনীতি করার কারণেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে তাঁদের স্বজনদের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যুর বিচার দাবি করেন তাঁরা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ‘স্টপ কিলিং ইন পুলিশ কাস্টডি’, ‘স্টপ টর্চার ইন পুলিশ স্টেশন’, ‘উই ওয়ান্ট ইন্টারন্যাশনাল ইনকোয়ারি’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সুমি আক্তার বলেন, তাঁর স্বামী চট্টগ্রাম ছাত্রদলের নেতা নুরুল আলমকে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে রাতে তুলে নেওয়া হয়। এর এক দিন পর নুরুলের লাশ কর্ণফুলী নদীতে পাওয়া যায়। বিচারের দাবি সরকারের কানে ঢুকছে না উল্লেখ করে সুমি আক্তার বলেন, তাঁরা বিচার না দেখে যেতে পারলেও সন্তানরা যেন বিচার দেখে যেতে পারে।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের ওয়াদুদ খন্দকারকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয় বলে অভিযোগ করেন তাঁর ভাই জাহিদ খন্দকার। তিনি জানান, তাঁর ভাই একটি দোকান চালাতেন এবং বিএনপির সমর্থক ছিলেন।
বরিশালের বাসিন্দা মো. ইউনূসের ছেলে রেজাউল করিম ছিলেন শিক্ষানবীশ আইনজীবী। ইউনূসের অভিযোগ, পুলিশ তাঁর ছেলেকে মিথ্যা মালা দিয়ে অত্যাচার করে মেরে ফেলেছে। অসুস্থ হয়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে সে মারা যায়। মামলা করলেও বিচার পাননি—এমন অভিযোগ করে ইউনূস বলেন, তাঁর কোল যারা খালি করেছে, বিশ্বের কাছে তাদের বিচার চান তিনি।
ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমানের (বাপ্পি) বোন ঝুমুর জানান, তাঁর ভাইকে ধরার জন্য তাঁদের পুরো পরিবারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকেও ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়। রাজনীতি করার অপরাধে তাঁর ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। ঝুমুর জানতে চান, রাজনীতি করা ছাড়া তাঁর ভাইয়ের কী দোষ ছিল?
ঢাকার লালবাগ ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেনের ছেলে আনান হোসেন বলেন, তাঁর বাবাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হাসপাতালে ভর্তি করে। নির্যাতনের কারণে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চোখ খুলতে পারতেন না।
আনোয়ার হোসেন ভালো চিকিৎসাও পায়নি—এ অভিযোগ করে আনান বলেন, তাঁর বাবা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাবা তাঁদের জীবনে আর ফিরে আসবেন না। এ হত্যার বিচার চান তিনি।
মানববন্ধনে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আরও কয়েকজন স্বজনহারা ভুক্তভোগী বক্তব্য রাখেন।