আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের ভুয়া এনআইডি তদন্তে কমিটি

হারিছ আহমেদ (বামে) ও তোফায়েল আহমেদ (ডানে)

মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেওয়ার ঘটনা তদন্ত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য গতকাল রোববার তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিজেদের নামের পাশাপাশি মা-বাবার নাম পাল্টে এনআইডি সংগ্রহ করেন আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ। তোফায়েল নিয়েছেন দুটি এনআইডি। একটি তানভীর আহমেদ তানজীল নামে, আরেকটি আসল নামে। হারিছ আহমেদ এনআইডি নেন মোহাম্মদ হাসান নামে।

মোহাম্মদ হাসান নামে করা এনআইডিতে হারিছ নিজের ছবি পরিবর্তন করেন ২০১৯ সালে। ছবি বদলানোর জন্য সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ। আইন অনুযায়ী, মিথ্যা তথ্য দিয়ে এনআইডি করা এবং একাধিক এনআইডি করা-দুটিই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাসপোর্টও তৈরি করেছেন আলোচিত দুই ভাই। তাঁদের স্ত্রীরাও একই কাজ করেছেন। সেনাপ্রধান থাকার সময়েই আজিজ আহমেদের ভাইদের ভুয়া তথ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করানোর ক্ষেত্রে তাঁর প্রভাব খাটানোর বিষয়ে প্রথম আলোসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তোফায়েলের দুটি এনআইডি নেওয়া এবং হারিছের ছবি পরিবর্তনে আজিজ আহমেদের সুপারিশ করা নিয়ে গত ২৮ মে সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো

আরও পড়ুন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকেও এ বিষয়ে ইসিকে চিঠি দেওয়া হয়। পরে গতকাল ইসির একজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব শফিউল আজিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দুদক থেকেও একটি চিঠি পেয়েছেন। অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে।

দেশের একাধিক থানা ও আদালতের নথিপত্র, সাজা মওকুফ চেয়ে (জোসেফের জন্য) মায়ের করা আবেদনসহ সাজা মওকুফের সরকারি প্রজ্ঞাপনে হারিছ ও জোসেফের বাবার নাম আব্দুল ওয়াদুদ ও মায়ের নাম রেনুজা বেগম লেখা আছে। কিন্তু হারিছ যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নিয়েছেন, তাতে বাবার নাম সুলেমান সরকার এবং মায়ের নাম রাহেলা বেগম উল্লেখ রয়েছে।

কিন্তু তানজীল নামে নেওয়া জোসেফের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে বাবার নাম সোলায়মান সরকার এবং মায়ের নাম ফাতেমা বেগম লেখা আছে। তবে তোফায়েলের আসল নামে নেওয়া এনআইডিতে বাবার নাম আব্দুল ওয়াদুদ, মায়ের নাম রেনুজা বেগম উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন অষ্টম শ্রেণি। পেশা দেখিয়েছেন ব্যবসা।

আরও পড়ুন

আজিজ আহমেদের ভাই হারিছ দুটি এবং আরেক ভাই আনিস একটি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ তাঁদের সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

১৯৯৬ সালে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলার আসামি ছিলেন জোসেফ। এ মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এই রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পান।

আজিজ আহমেদ ২০১৮ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সম্প্রতি এই সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য হয়েছেন।