ভারত থেকে কী এনেছেন, কিছুই না: মির্জা ফখরুল

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরছবি: প্রথম আলো

আবার ক্ষমতায় কীভাবে থাকা যায়, সে ব্যবস্থা করার আশাতেই প্রধানমন্ত্রী ভারতে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর নিয়ে বলেন, ‘খুব নাচতে নাচতে চলে গেলেন ভারতবর্ষে। একটা মাত্র আশায় যে ভারতে গিয়ে আবার ক্ষমতায় কীভাবে থাকা যায় তার জন্য একটি ব্যবস্থা ওনারা করে আসবেন। কী এনেছেন? কিছুই না।’

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ‘রাজনীতি: পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আয়োজন করে ইতি প্রকাশন।

ভারত সফর নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলছি, কী এনেছেন। ১৫৩ কিউসেক পানির কথা বলেছেন। এ ছাড়া তো আর কিছুই দেখছি না। বলা হয়েছিল সীমান্তে হত্যা জিরোতে (শূন্য) আনা হবে। সেদিনই আমাদের সীমান্তে গুলি করে ১৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। আরও দুজন নিখোঁজ আছে। এটি অহরহ ঘটছে। সেটি কিন্তু এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি।’

‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক হোক—এটি আমরা সবাই চাই’ বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরা সে জন্য কৃতজ্ঞ। সব সময় আপনারা বলতে থাকেন এমন পর্যায়ে আপনাদের সম্পর্ক গেছে যে সেই সম্পর্কটা স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্ক। আপনাদের মন্ত্রীই বলে সে কথা।’

‘আজকে এই রাষ্ট্রের যে অবস্থা, এর জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ’ অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এই দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আজকে এই দেশে অর্থনীতিকে পুরোপুরিভাবে একটা লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করে ফেলেছে। লুটপাটের অর্থনীতি ছাড়া এখানে আর কোনো অর্থনীতি নেই। যে দেশে এখনো ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না, মানুষ স্বাস্থ্যব্যবস্থা সঠিকভাবে পায় না, ছেলেদের বিএ–এমএ পাস করার পর কর্মসংস্থান নেই— সেখানে বলছেন উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। এ কথাগুলো বলে মানুষকে প্রতারণা করে, মানুষের সঙ্গে পুরোপুরি বেইমানি করে গণতন্ত্রবিনাশী একটি শক্তি হয়ে উঠে সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, এই জাতি, রাষ্ট্রকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আজকে কোথাও বিচার নেই। বিচারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটি দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘পাকুন্দিয়ার যেই ছেলেটা, যাকে পুলিশ গুলি করেছে—একেবারে কাছে থেকে। তার ফুসফুস ফুটা হয়ে গেছে। তার লিভার ও কিডনি ফুটা হয়ে গেছে। এখনো বেঁচে আছে। এই যে হাজার হাজার লোককে আপনারা আহত করেছেন, গুলি করেছেন, মামলা করেছেন, আবার আগের মতো একই কায়দায় মামলা করছেন—এই করে কিন্তু বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। এই করে বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানাতে বানাতে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে চলে গেছেন, এখন বাংলাদেশের মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে।’

বাংলাদেশের মানুষ সব সময়ই সংগ্রাম ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তাদের অধিকার আদায় করে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সেই সংগ্রাম শুরু হয়েছে। সেই সংগ্রামে মানুষ অবশ্যই… তা অর্জন করবে। যাঁরা লেখালেখি করেন, যাঁরা বুদ্ধিজীবী, তাঁদের কাছে আহ্বান, আসুন, সত্যটা প্রকাশ করুন। সাধারণ মানুষের সংগ্রামের সঙ্গে, তাদের রক্তের সঙ্গে আপনারা একাত্মতা ঘোষণা করে এই দেশকে আবারও মুক্ত করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও বইয়ের লেখক মো. হারুন–অর–রশিদ।