চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশের আগের রাতে নেতা-কর্মীদের ঘরে ঘরে পুলিশি অভিযানের অভিযোগ
চট্টগ্রামে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঘরে ঘরে গতকাল মঙ্গলবার রাতে পুলিশি অভিযানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, আজ বুধবার বেলা দুইটায় চট্টগ্রাম নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে দলটির বিভাগীয় সমাবেশ রয়েছে। এ সমাবেশে নেতা-কর্মীরা যাতে অংশ না নেন, সে জন্য তাঁদের ভয়ভীতি দেখাতে গত রাতে বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। তবে নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগ গত রাতে ঘরে না থাকায় গ্রেপ্তার এড়াতে পেরেছেন।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
আজ চট্টগ্রাম শহরে বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির প্রায় দুই মাসব্যাপী এ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে, যা শেষ হবে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশ দিয়ে।
আজকের বিভাগীয় সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার নেতা-কর্মীদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে আজ সকালে নোয়াখালী থেকে সমাবেশে আসার পথে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গত রাতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থেকে আসার সময়ও দলটির নেতা-কর্মীরা হামলা শিকার হন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঘরে ঘরে গতকাল রাতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। কিন্তু আমাদের নেতা-কর্মীরা বিষয়টি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই অনেকেই গত রাতে ঘরে ছিলেন না। মূলত সমাবেশে অংশ না নেওয়ার জন্য পুলিশ অভিযানের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, নগরের আশপাশের উপজেলা থেকে আসার জন্য আগেই বাস ভাড়া করা হয়েছিল। কিন্তু আজ সকালে অনেক বাসচালক বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে আসতে অপারগতা জানান। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা ভয়ভীতি দেখানোয় বাসচালকেরা আসতে চাইছেন না।
মোহাম্মদ শাহজাহান আরও বলেন, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশে আসার সময় হামলার শিকার হয়েছেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, নোয়াখালীর কবিরহাট থেকে আসার সময় মিরসরাইয়ের নিজামপুর কলেজের সামনে একটি মাইক্রোবাসে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে কবিরহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমানসহ ১০ থেকে ১২ জন নেতা-কর্মী আহত হন। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা।
নগর যুবদলের সহসভাপতি দিদারুল ফেরদৌসের বাসা নগরের পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেট এলাকায়। তিনি আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে তাঁর বাসায় সাদাপোশাকধারী পুলিশ যায়। এ সময় মায়ের কাছে দিদারুলের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। তিনি বাসায় নেই জানানোর পর পুলিশ চলে যায়।
একই এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান চৌধুরী ও ওয়ার্ড যুবদলের সহসভাপতি আজিজ চৌধুরীর বাসায় গত রাতে পুলিশ গিয়েছিল বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। তাঁরা বাসায় না থাকায় গ্রেপ্তার এড়াতে পেরেছেন বলে জানান।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, বাসাবাড়িসহ নগরের বিভিন্ন হোটেলে গতকাল রাতে সাদাপোশাকধারী পুলিশের অভিযান ও নজরদারি ছিল। এ জন্য গত রাতে নেতা-কর্মীরা বাড়ির বাইরে ছিলেন। তাঁরা অবস্থানস্থান পাল্টে রাতটা কাটিয়ে দিয়েছেন। যত বাধাবিপত্তিই আসুক, বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশে অংশ নেবেন।
নগরের মতো জেলার বিভিন্ন স্থানে গত রাতে পুলিশ অভিযান চালায় বলে অভিযোগ করেন বিএনপির নেতারা। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ মুন্না, হাটহাজারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মিনহাজ মাসুম ও নগরের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহসভাপতি নিজামুদ্দিনের বাসায় গতকাল রাতে পুলিশ গিয়েছিল বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ইলিয়াস আলী আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীসহ বিভিন্ন উপজেলায় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গত রাতে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে তাঁরা কেউ বাসায় না থাকায় তাঁদের ধরতে পারেনি পুলিশ।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) পঙ্কজ দত্ত আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সমাবেশ যাতে সুষ্ঠুভাবে হয়, সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। গত রাতে পুলিশ কারও বাসায় অভিযান চালায়নি। পুলিশ কাউকে ভয়ভীতি দেখাতেও যায়নি। কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলে সে ক্ষেত্রে হয়তো পুলিশ অভিযানে যেতে পারে। কিন্তু গত রাতে গণহারে গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য পুলিশের কাছে নেই।