আওয়ামী লীগের অবস্থান
ঢাকায় সব কর্মসূচিতে ছাড় পাবে না বিএনপি
রাজধানীর নয়াপল্টন ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকার বাইরে বিএনপি কর্মসূচি পালন করুক, সেটা সরকারি দল চাইছে না।
রাজধানী ঢাকার সব জায়গায় সব কর্মসূচি পালনে বিএনপিকে ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দল চায় বিএনপির কর্মসূচি দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে সীমাবদ্ধ রাখতে। এর বাইরে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিএনপি মিছিল–সমাবেশ করতে গেলে বাধা দেওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগ ও সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকার ও আওয়ামী লীগ চেয়েছে, বিএনপি সীমিতভাবে শুধু কর্মসূচি পালন করুক। কিন্তু সরকারি দলের নেতারা মনে করছেন, বিএনপি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারা দেশে সাংগঠনিক শক্তি জোরদার করার চেষ্টা করছে। তাদের টানা কর্মসূচি পালন ও তাতে বড় জমায়েত দেখে দলটিকে চাপে রাখতে বিভিন্ন জেলা–উপজেলায় বাধা, হামলা ও নতুন মামলা দেওয়া শুরু হয়েছে। সর্বশেষ ঢাকায়ও বিএনপিকে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু পায়ে পাড়া দিয়ে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড করলে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ করবেই।
এর আগে ঢাকার বাইরে বিএনপিকে অবাধে কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার বিষয়ে একধরনের নির্দেশনা আছে সরকারের। প্রথমে গত আগস্টে ভোলায় পুলিশের গুলিতে বিএনপির দুজন নেতা-কর্মী নিহত হন। এরপর ২২ আগস্ট থেকে টানা কর্মসূচি শুরু করে দলটি। এর মধ্যে ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে একজন কর্মী নিহত হওয়ার পর ঢাকার ১৬টি জায়গায় ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপি নয়াপল্টন ও জাতীয় প্রেসক্লাবের আশপাশ পর্যন্ত বিনা বাধায় কর্মসূচি পালন করতে পারবে। এর বাইরে কর্মসূচি পালন করলে বাধা পাবে।
ঢাকায় টানা এই কর্মসূচি শুরুর পর গতকাল পর্যন্ত তিনটি কর্মসূচি বাধাহীন ছিল। বাকি তিনটিতে বিভিন্ন পর্যায়ে বাধা বা হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, শুরুতে সরকার মনে করেছিল, ঢাকা ও বড় শহরগুলোতে দিবসভিত্তিক কর্মসূচি এবং দলের সাংগঠনিক তৎপরতা চালাবে বিএনপি। কিন্তু দলটি যেভাবে টানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতা–কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছে, তাতে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায় কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ে। যার কারণে নানা কৌশলে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া শুরু হয়।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা খুবই আক্রমণাত্মক। এ জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু পায়ে পাড়া দিয়ে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড করলে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ করবেই।
দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, গত আগস্টে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির বিষয়ে সরকারের মনোভাব জানতে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছেন। তখন বার্তা ছিল এমন যে পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে ঢাকায় বিএনপি কর্মসূচি পালন করতে পারবে। এরপর চলতি মাসের শুরুতে দলের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর নেতাদের নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপিকে নয়াপল্টন-প্রেসক্লাবের বাইরে কোথাও কর্মসূচি করতে না দেওয়ার বিষয়ে বার্তা পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মহানগর আওয়ামী লীগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সহযোগী সংগঠনগুলো অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাতে অংশ নেয়, সে জন্য বিএনপিকে সীমিতভাবে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু বিএনপি উল্টো সরকার ও আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে। দলটি নানা ইস্যুতে বড় বড় জমায়েত করা শুরু করেছে, যা সরকার চাইছে না।
যদিও ঢাকায় নয়াপল্টনের বাইরে বিএনপি কর্মসূচি পালন করতে চাইলে কীভাবে প্রতিহত করা হবে, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো কৌশল বলে দেওয়া হয়নি। মহানগরের নেতারা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যরা মিলে নিজেরা কর্মসূচি তৈরি করে মাঠে থাকবেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, ছয়-সাত বছর ধরে সরকার বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে যে ভীতির সঞ্চার করতে পেরেছিল, সাম্প্রতিক টানা কর্মসূচির মাধ্যমে তা কেটে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মার খেয়ে কিংবা চাপের মধ্যে থেকেও যদি তারা কর্মসূচি চালিয়ে যায়, তাহলে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ‘বিজয়ী’ মনোভাব চলে আসবে। এ ক্ষেত্রে তাদের দমানো কঠিন হবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সরকার আসলে বিএনপিকে নিয়ে দোটানায় পড়েছে। দলটিকে নির্বাচনে আনতে চায় সরকার। আবার ছয়-সাত বছর ধরে বিরোধীদের চাপে রেখে যেভাবে নির্বিঘ্নে দেশ চালিয়েছে, সেই পরিস্থিতি উল্টে যাক, সেটাও হতে দিতে চায় না সরকার। এ পরিস্থিতিতে কিছুটা দুর্বল বিএনপিকে মাঠে দেখতে চায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপি দীর্ঘদিন পর মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে নিজেদের সংগঠিত শক্তি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। এখনকার বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল ২০১৪-১৫ সালের চেয়ে ভিন্ন। ফলে তাদের একই সঙ্গে চাপে রাখা আবার ছাড় দেওয়া—এই দুই কৌশল কীভাবে কার্যকর করা হবে, সেটা সরকারি দলের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।