ধানমন্ডিতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ

ঢাকার ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাব এলাকায় পুলিশ–বিএনপি নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। আজ মঙ্গলবার বিকেলেছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ঢাকার ধানমন্ডিতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাব এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেন। এ ঘটনার আগেই ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনার জন্য পুলিশ ও বিএনপি নেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। বিএনপির অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা আটকে পুলিশ লাঠিপেটা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। আর পুলিশ বলছে, বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

সংঘর্ষের সময় বিএনপির ধানমন্ডি থানার সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম, ওই থানা শাখার সাবেক সদস্যসচিব সৈকতসহ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে আজ বিকেলে ঢাকার দুই এলাকায় বিএনপির দুটি পদযাত্রার কর্মসূচি ছিল। একটি ছিল ধানমন্ডিতে, অন্যটি গাবতলী এলাকায়। বেলা তিনটায় ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সড়কে সমাবেশ শেষে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রা জিগাতলা, সিটি কলেজ হয়ে ল্যাবএইড হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করছে পুলিশ
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পদযাত্রা নিয়ে তাঁরা সিটি কলেজ এলাকায় যেতেই পুলিশ আটকে দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ নেতা–কর্মীদের লাঠিপেটা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ধানমন্ডির পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা হলো। কী কারণে পুলিশ টিয়ারশেল মারল, গুলি করল বুঝলাম না।’

বিএনপি নেতা–কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

এ বিষয়ে পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবেই পদযাত্রা হচ্ছিল। হঠাৎ করে মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা হয়। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য টিয়ারশেল নিক্ষেপসহ যা যা করার আমরা সেটা করেছি।’

বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৩০-৩৫ জনের একটি মিছিল ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে সিটি কলেজের সামনে থেকে সায়েন্স ল্যাব হয়ে নিউমার্কেটের দিকে যাচ্ছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের কারও কারও হাতে লাঠিসোঁটা দেখা যায়। কয়েকজনের মাথায় হেলমেটও দেখা যায়।

পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপি নেতা–কর্মীরা
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলনের ঘোষণা: সমাবেশে গয়েশ্বর

ধানমন্ডিতে পদযাত্রা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তাঁরা এখনো সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করেননি। আওয়ামী লীগ যদি দাবি মেনে পদত্যাগ করে, তাহলে তাঁদের আর সরকার পতনের আন্দোলন করতে হবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা করবে না। তাই অচিরেই তাঁরা সরকার পতনের আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের শেষ কথা, হটাও হাসিনা বাঁচাও দেশ, টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, তাঁদের দাবি একটি; তা হলো এই সরকারের পদত্যাগ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। যার যার ভোট সে দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১০ দফা। আর ১০ দফার মূল কথা হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। আর বাকিগুলো হলো প্রাসঙ্গিক।

গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, ‘আমরা এই ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের পদত্যাগ চাই, এই অবৈধ সংসদ বাতিল চাই। সরকারকে বলব, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় সরকার এসে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, সেখানে আমরা অংশগ্রহণ করব। আমরা আশা করব, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও অংশগ্রহণ করবে। জনগণ যাকে ইচ্ছা ভোট দেবে, সে–ই সরকার গঠন করবে।’

গয়েশ্বর দাবি করেন, বিএনপির লড়াইটা ক্ষমতায় যাওয়ার নয়, এই লড়াই হলো দেশে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা।

আরও পড়ুন