চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের দলের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমকে মেয়র প্রার্থী করতে পারে। দলটির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে। দলটি আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে।
যদিও বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের আরেকজন নেতা মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মদ আবুল খায়েরের নামও প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে থাকা দুজনই দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের ছোট ভাই। দলীয় রাজনীতির বাইরে তাঁদের পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়ও রয়েছে।
তবে ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নির্ধারণের জন্য তাদের নীতিনির্ধারকেরা এ পর্যন্ত কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। যেহেতু চরমোনাই পীরের পরিবারের দুজন সদস্য প্রার্থী হতে চাইছেন; ফলে পারিবারের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে।
এসব আলোচনায় দলের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমকে প্রার্থী করার পক্ষেই একধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপরও দলটির ভেতরে কারও কারও ভিন্ন মতও রয়েছে। ফলে আগামীকাল দলের নীতিনির্ধারকেরা আবার আলোচনা করে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে তা ঘোষণা করবেন বলে দলটির সূত্রগুলো বলছে।
ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘বরিশালে আমাদের দলের সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমকে মেয়র প্রার্থী করার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু সৈয়দ এছহাক মুহাম্মদ আবুল খায়েরও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন। সে জন্য আমরা আগামীকাল আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
চরমোনাই পীরের পরিবারের দুজন সদস্য মেয়র পদে আগ্রহী হওয়ায় প্রার্থী নির্ধারণ করার প্রশ্নে জটিলতায় পড়েছে ইসলামী আন্দোলন। সে কারণে আসন্ন পাঁচ সিটি নির্বাচনে দলটি বরিশাল বাদে অন্য চার সিটির জন্য অনেক আগেই প্রার্থী ঠিক করে তাদের নামও ঘোষণা করেছে। ১৮ এপ্রিল ইসলামী আন্দোলন বরিশাল সিটি নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আকস্মিকভাবে তা তখন স্থগিত করা হয়।
এখন আবার আগামীকাল বৃহস্পতিবার ইসলামী আন্দোলন বরিশালের প্রার্থী ঘোষণা করার জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বরিশালে চরমোনাই মাদ্রাসা মিলনায়তনে দলীয় নেতা–কর্মীদের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের কাছে আগামীকাল বেলা তিনটায় দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে দলটি জানিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের সূত্রগুলো বলছে, তাদের দলের নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ব্যক্তিগতভাবেও বরিশালের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে দলের নিজস্ব ভোট ব্যাংকের বাইরেও তাঁর সমর্থনে ভোট আসতে পারে। সে জন্য দলের বড় অংশ মনে করছে, ভোটের মাঠে সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের শক্ত অবস্থান থাকবে।
তবে ভিন্ন যুক্তিও আছে দলটিতে। যাঁরা ভিন্ন যুক্তি দিচ্ছেন তাঁরা মনে করেন, তাঁদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করবেন। তিনি স্থানীয় সরকারব্যবস্থার সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভালো ফল না করলে সেটা দলের জন্য নেতিবাচক হবে।
এমন যুক্তি দেওয়া হয় সৈয়দ এছহাক মুহাম্মদ আবুল খায়েরের পক্ষে। তিনি স্থানীয় রাজনীতি করেন। দলটির এই নেতা চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। এ ছাড়া তিনি ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক।
তবে যুক্তি যা–ই দেওয়া হোক না কেন, সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমকেই বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী করার সম্ভবনা বেশি—এমন আভাস দিচ্ছেন দলটির নেতাদের অনেকে।
পাঁচ সিটির নির্বাচনে বিরোধী দল বিএনপি দলগতভাবে অংশ নেবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা আসছে বিএনপি।
বিএনপি দলগতভাবে সিটি নির্বাচনে না থাকায় ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য দলগুলো কাকে প্রার্থী করছে, সে ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ রয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বর্তমান সরকারের সময় স্থানীয় সরকারব্যবস্থার সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। সে কারণে ইসলামী আন্দোলনও বরিশাল সিটির নির্বাচনকে তাদের দলের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে বরিশালে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলটি বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে প্রার্থী করেছে। যদিও বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের বেশির ভাগই এখন দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু প্রার্থী হতে না পেরে সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর সমর্থকদের চাপা ক্ষোভ থাকবে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে মনে করেন।
ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বদল নিয়ে যে পরিস্থিতি হয়েছে, সেটিও তাঁরা তাঁদের প্রার্থী নির্ধারণে বিবেচনায় নিচ্ছেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৯ থেকে ২১ মে, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ মে ও ভোট গ্রহণ ১২ জুন।